শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পঙ্তিমালা

আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৩, ১০:২০

মার্চ ১৯৭১
সালেহ আহমদ

মিছিলে ফুল ছুড়েছিল
দাঙ্গা পুলিশের কভার্ড ট্রাক থেকে,
কোন সে পুলিশ ছুড়েছিল
কেউ বলতে পারে না।

লাইন প্যারেডে দাঁড় করিয়ে অবাঙালি বস,
ঈগলের তীক্ষ্মতায় লাইন পুলিশের
চোখে চোখ রাখে, অ্যাটেনশন পজিশনে—

সম্মুখ দৃষ্টিতে সব পুলিশ সোজা হয়ে দাঁড়ায়,
অবাঙালি পুলিশ বস চিত্কার করে ওঠে—
সব লোগ গাদ্দার বেইমান।

মিছিল থেকে ফুল ছোড়ে পুলিশের ট্রাকে,
ফুল ছুড়ে মারে মিছিলের ডানপিটে ছেলেরা,
ট্রাকের ভেতরের পা রাখার জায়গা
ফুলে ফুলে ভরে যায়,

ঢাকা শহরের লক্ষ কোটি জনতা
একটা ফুলের জন্য, কোটি কোটি গোলাপ
পুলিশের ট্রাকে তোলে,
আটই মার্চ রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র থেকে
স্বাধীনতার সুখ পাঠ শোনা যায়—
যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো।

নিরুদ্দেশ
প্রশান্ত ভৌমিক

নীললোহিতের মতো হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আমার
বহুদিনের। শুধুমাত্র দিকশূন্যপুরের নিশানা জানা
নেই বলেই সম্ভব হয়নি। জানি, সেখানে আমার জন্য
অপেক্ষায় বন্দনাদি-রোহিলাসহ আরো অনেকেই।
কিন্তু আমার আকর্ষণ নারীতে নয়। আমার আকর্ষণ
বসন্ত রাওতে। আমি দেখতে চাই নির্জনে বসে সে
কীসের ছবি আঁকছে সেখানে। কী নতুন বিশ্ব সৃষ্টি
করছে তাঁর ক্যানভাসে। নতুন সে পৃথিবী কি
ছলনামুক্ত? নির্দ্বিধায় কি সেখানে যে কারো কাছে
নিজেকে সঁপে দেওয়া যায়? যদি সত্যিকারের এমন
পৃথিবী বসন্ত রাও তাঁর ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে
পারে, আমি কোনো পিছুটান না রেখেই চলে যাব
সেই দিকশূন্যপুরে।

 

বনানী রেলক্রসিং
সারওয়ার-উল-ইসলাম

এই নগরীর কোনো রেলক্রসিংয়ে
ট্রেনের চলে যাওয়া দেখলে
বুকের ভেতর নদীর পাড় ভাঙার শব্দ শুনি।
ব্যারিকেড তোলার পরও তাকিয়ে থাকি
যতক্ষণ না দৃষ্টির আড়াল হয় ট্রেন।
অথচ ট্রেনের চলে যাওয়ার সাথে
কোনো সম্পর্ক নেই তোমার।

কতদিন দেখা হয় না আমাদের?
সুনীলের তেত্রিশ বছর প্রায়;
না, বরুণার মতো কথা রাখোনি—
এমন অভিযোগ নেই আমার।
আমাদের মধ্যে তেমন সম্পর্কও ছিল না।

পরে জেনেছি তোমার বিয়ের আগের রাতে
মাত্র পঞ্চাশ টাকার একটা নতুন নোট নিয়ে
আমার সাথে পালাতে চেয়েছিলে।
কিন্তু যার মাধ্যমে পাঠিয়েছিলে চিরকুট
সেটা সে পৌঁছে দেয়নি আমার হাতে।

রেলক্রসিং পেরোবার সময় ট্রেনের ঝিকঝিক শব্দ
তোমাকে আমার কতটা কাছে এনে দেয়—
তা তুমি কোনোদিন জানবে না।
বনানী রেলক্রসিং তাই তো আমার প্রিয় স্থান।
কোনোদিন যদি তোমার সাথে দেখা হয়ে যায়
এই রেলক্রসিংয়ে আসার অনুরোধ করব।
তারপর চুপচাপ রেললাইনের স্লিপার ধরে
সমান্তরালভাবে হেঁটে যাব দুজনে, সামনে।

লোহার লাইন দুটোর এক বিন্দুতে
মেশার সুযোগ নেই কোনোদিন।



নিঃস্ব নিরন্তর
লুৎফর রহমান

সম্পর্কগুলো গিলে খাচ্ছে সময়
অবিরত ব্যস্ততা, অনলাইন
একান্ত প্রাণহীন ডিভাইস।
আবহমানতা নেই
নেই ভাবান্তর।
অনুবাদে জীবন খুঁজি
মূলে নিঃস্ব নিরন্তর।

ইত্তেফাক/এসজেড

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন