শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৭ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

ইসলামে স্বাধীন চিন্তাচর্চার অধিকার

আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৩, ১২:০৬

স্বাধীন চিন্তাচর্চার অধিকার এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মতামত প্রকাশের অধিকার ইসলামে সেই প্রথম যুগ থেকেই স্বীকৃত হয়ে এসেছে। খলিফা ওমার ইবনে আবদুল আজিজ (৬৮২-৭২০) এবং আল মামুনের (৭৮৬-৮৩৩) রাজত্বকালে রাষ্ট্রীয় পদাধিকারের বৈধতার প্রশ্নের বিতর্ক করার অধিকার ছিল সব নাগরিকের, এমনকি খলিফার সামনেও। নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধানের ওপর জোর দিয়েছে ইসলাম। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রশাসক শাসনকার্য চালানোর ক্ষেত্রে জনমতের প্রতি থাকবেন শ্রদ্ধাশীল। নির্দিষ্ট বিধানবহির্ভূতভাবে শাসনকাজ পরিচালিত হলে নাগরিকদের তার প্রতিবিধান প্রার্থনার অধিকারের স্বীকৃতি আছে ইসলামে।

ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) খলিফা নিযুক্ত হওয়ার পর জনগণের উদ্দেশে প্রদত্ত প্রথম বক্তৃতাতেই বলেছিলেন, ‘লোক সকল! আমি আপনাদের প্রশাসক নিযুক্ত হয়েছি, যদিও আমি আপনাদের মধ্যে খুব বেশি উপযুক্ত নই। যদি আপনারা আমাকে সঠিক ও সত্য পথে প্রশাসনকার্য চালাতে দেখেন, তাহলে আমাকে সহায়তা করবেন। আর যদি বিপথগামী হতে দেখেন, তাহলে আমাকে সত্পথে ফিরিয়ে আনবেন। যতক্ষণ আমি সত্য ও সঠিক পথে থাকব, ততক্ষণ আমাকে মান্য করবেন। বিপথগামী হলে আপনাদের প্রশাসনে আমার অধিকার থাকবে না। ইসলামে নেতার নির্দেশ মান্য ও অনুসরণের ওপরও তাগিদ রয়েছে। নবিজি (স.) বলেছেন, নেতার আদেশ শোনা ও পালন করা অবশ্য কর্তব্য। চাই তা পছন্দমতো হোক  বা না হোক। তবে তা যেন নাফরমানি কাজের জন্য না হয়। যখন নাফরমানিমূলক কোনো কাজের আদেশ দেওয়া হয়, তখন তা পালন করা যাবে না।

বিদায় হজের ভাষণে বিশ্বনবি (স.) বলেছিলেন, ‘কোনো কাফির ক্রীতদাসকেও যদি তোমাদের প্রশাসক নিযুক্ত করা হয় এবং সে যদি কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক তোমাদের পরিচালনা করে, তাহলে অবশ্যই তোমরা তাকে মান্য করবে।’ বস্তুত, কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত প্রশাসনব্যবস্থা অনুসরণের নির্দেশনায় কল্যাণ নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি ইসলাম ও গণতন্ত্রের পারস্পরিক সম্পর্কের তাত্পর্যকে তুলে ধরে। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা যদি কোনো বিবাদ-বিসংবাদে আপতিত হও, তাহলে কুরআন-সুন্নাহর আলোকেই বিচার করবে, যদি তোমরা আল্লাহ ও বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাস এনে থাকো।’ পূর্ণতা লাভের এটাই সর্বোত্কৃষ্ট পন্থা। তোমাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত (উলু আল আমর মিনকুম) বলতে তাদের েবোঝায়, যারা তাদের বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানবেত্তার জন্য সমধিক প্রসিদ্ধ এবং প্রশাসনিক ক্ষমতায় দক্ষ। হজরত ওমর (রা.) জনগণকে একদা বলছিলেন, ‘আপনারা যদি বিপথগামী হতে দেখেন, তাহলে আমাকে সোজা পথে আনবেন।’ এক আরব এ সময় দাঁড়িয়ে বললেন, ‘যদি আমরা আপনাকে পথভ্রষ্ট হতে দেখি, তাহলে তলোয়ার দিয়ে আপনাকে পথে আনব।’ এ কথা শুনে হজরত ওমর (রা.) বলেছিলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আমি এমন লোকদের প্রশাসক নিযুক্ত হয়েছি, যারা পথভ্রষ্ট ওমরের মতো লোকের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে জানে।’

বস্তুত ইসলামই আধুনিক গণতন্ত্রের মূল দর্শন, নিয়ামকের মূল্যবোধ ও প্রেরণার উত্স। ইসলামের অন্তর্নিহিত শক্তি, শিক্ষা ও আদর্শের অয়োময় অধ্যয়ন, চর্চা ও এর তাত্পর্যগত দিকে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার কিংবা উপেক্ষা করার কোনো অবকাশ নেই।

লেখক: সরকারের সাবেক সচিব ও
সাবেক চেয়ারম্যান, এনবিআর

ইত্তেফাক/কেকে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন