মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ৭ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

আধিপত্য বিস্তারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিকল্পিত আগুন: তদন্ত কমিটি

আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৩, ২২:১৩

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার করতে পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে আগুন লাগানো হয়। অগ্নিকাণ্ডে ২ হাজার ৮০৫টি শেল্টার পুড়ে ছাই হয়েছে। এতে ৩ হাজার ১১ পরিবারের ১৫ হাজার ৯২৬ রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়ে পড়ে। নিহতের ঘটনা না ঘটলেও আহত হয়েছেন ২১২ রোহিঙ্গা। ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একই সঙ্গে ঘটনার অধিক তদন্ত করতে মামলা দায়েরসহ ১২টি সুপারিশ করে তদন্ত রিপোর্ট জেলা প্রশাসককে হস্তান্তর করা হয়েছে।

রোববার (১২ মার্চ) বিকালে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরানের হাতে ৪ পৃষ্ঠার মূল রিপোর্টের সঙ্গে ৭০ পৃষ্ঠার সাপোর্টিং ডকুমেন্টসসহ ৭৪ পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন।

তদন্ত কমিটির করা সুপারিশগুলো হলো:
১. অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত নাশকতা বিবেচনায় একটি মামলা করা যেতে পারে এবং নিয়মিতভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চিরুনি অভিযান পরিচালনা ও গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে।

২. দশ লক্ষ্যাধিক এফডিএনএনদের জন্য স্বতন্ত্র এক বা একাধিক ফায়ারব্রিগেড ইউনিট এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার কেন্দ্রে স্থাপন করা যেতে পারে; কারণ, আগুনের ঘটনা অনেকটা নিয়মিত।
 
৩. শেল্টারের ত্রেপল ও বাঁশ ব্যবহারের পরিবর্তে বিকল্প শেল্টার উপকরণ ব্যবহারের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন যা অপেক্ষাকৃত কম দাহ্য পদার্থের তৈরি।


 
৪. রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকে প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসে গাড়ি সহজে চলাচল করতে পারবে।

৫. ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যত্রতত্র মার্কেট করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং বড় রাস্তার ধার ব্যতীত অন্যকোন স্থানে দাহ্য পদার্থের আউটলেট করা থেকে বিরত রাখা।
 
৬. প্রতিটি ব্লকের কেন্দ্রে বা রাস্তার পাশে কংক্রিটের পানির চৌবাচ্চা বা জলাধার নির্মাণ করা এবং বর্তমানে ব্যবহৃত ওয়াটার নেটওয়াক সমূহে হাইড্রেন্ট পয়েন্ট রাখা।
 
৭. শেল্টার সমূহ অধিক ঘনবসতিপূর্ণ ও অনেক স্থান যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে অগম্য বিবেচনায় ক্যাম্প সমূহের প্রবেশমূখে ক্যাম্পের একসেস রোড উল্লেখপূর্বক মানচিত্র স্থাপন করা যেতে পারে।
 
৮. ক্যাম্পে কোথাও আগুন লাগলে রোহিঙ্গারা যেন আগুন নেভাতে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে সে জন্য তাদেরকে নিয়মিত ফায়ার ফাইটিং প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
 
৯. এফডিএমএন ক্যাম্পের ব্লকগুলিতে বিভিন্ন পয়েন্টে ওয়ারলেস টাওয়ার স্থাপন করে সেখানে একইসঙ্গে ৩৬০ ডিগ্রি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে নজরদারি বাড়ানো যেতে পারে। 


 
১০. এক ক্যাম্পে অপরাধ করে অন্য ক্যাম্পে যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সে লক্ষ্যে প্রতিটি ক্যাম্পে পৃথকভাবে কার্যকর নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ করা যেতে পারে। 
১১. আগুন এর সূত্রপাত এর সঙ্গে সঙ্গে শেল্টারসমূহ হতে গ্যাস সিলিন্ডার সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এছাড়া, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও এসি সমূহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
 
১২. শেল্টার নির্মানের গাইডলাইন অনুযায়ী ক্যাম্প ১১ তে শেল্টার নির্মান করা হয়নি অর্থাৎ এক শেল্টারের থেকে অন্য শেল্টারের ন্যূনতম দুরুত্ব ৬ ফুট থেকে ১০ ফুট রাখার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। ভবিষ্যতে মধ্যমেয়াদী শেল্টার নির্মানের ক্ষেত্রে এই নিয়মসহ শেল্টার নির্মাণের গাইডলাইন ভালোভাবে অনুসরণ করে শেল্টার নির্মাণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

ইত্তেফাক/পিও