শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

একা একা ট্র্যাকিং করা যাবে না নেপালের পাহাড়ে

আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৩, ১২:১৫

নেপালের পাহাড়ে একাকী ট্র্যাকিং বা অ্যাডভেঞ্চারের দিন শেষ! গাইডের সাহায্যে ব্যাকপ্যাকাররা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশটির পাহাড়গুলো ঘুরে দেখতে পারবেন। আগামী ১ এপ্রিল থেকে এই নতুন নিয়ম কার্যকর হতে চলেছে। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সাল থেকে এমন নিয়ম শোনা যাচ্ছিল। সে বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদেশি নাগরিকদের ওপর হামলা হলে নেপাল এমন ঘোষণা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। যদিও পরে কর্তৃপক্ষ তা স্থগিত করে। নিরাপত্তার কারণে শেষ পর্যন্ত চলতি বসন্তে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করছে নেপাল।

নেপালের পাহাড়ে একাকী ট্র্যাকিং বা অ্যাডভেঞ্চারের দিন শেষ!

নেপালের ট্র্যাকিং এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নীলহরি বাস্তোলার বরাত দিয়ে কাঠমান্ডু পোস্ট জানায়, প্রতি বছর কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ জন ট্রেকার নিখোঁজ হয়, বেশিরভাগই স্বাধীন ট্রেকার। এটি একটি গুরুতর সমস্যা।

এদিকে, নেপালের পর্যটন বোর্ডের পরিচালক মণিরাজ লামিছানে হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, পর্যটকদের সুবিধার্থে এই সিদ্ধান্ত। পর্যটকরা প্রায়শই হারিয়ে যায় এবং একক ট্র্যাকিংয়ে নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করতে পারে। এটা কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা একক ট্রেক নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

 প্রতি বছর কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ জন ট্রেকার নিখোঁজ হয়, বেশিরভাগই স্বাধীন ট্রেকার।

তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় এভারেস্ট অঞ্চলে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় অপারেটররা। নেপাল ট্যুরিজম বোর্ড ঘোষণা করেছে, তারা একক ট্রেকারদের জন্য টিআইএমএস (ট্রেকারস ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) কার্ড অনুমোদন করবে না যদি না একজন গাইড সঙ্গে থাকে।

নেপালের পর্যটন মন্ত্রক কর্তৃক জারি করা এই কার্ড কাঠমান্ডু, পোখারা ও দেশের অন্যান্য শহরের পর্যটন পরিষেবা কেন্দ্রগুলোতে পাওয়া যাবে। ট্র্যাকিং প্রত্যাশীদের অবশ্যই তাদের পাসপোর্ট ফটোকপি, ব্যক্তিগত ছবি ও ভ্রমণ বীমা নথি প্রদান করতে হবে। 

তারা একক ট্রেকারদের জন্য টিআইএমএস (ট্রেকারস ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) কার্ড অনুমোদন করবে না যদি না একজন গাইড সঙ্গে থাকে।

এছাড়া, একটি গ্রুপে আন্তর্জাতিক ট্রেকারদের এক হাজার নেপালি রুপি (প্রায় ৭ ডলার) ফি দিতে হয়। এতদিন একক ট্রেকাররা প্রতি রুটে দুই হাজার রুপি ফি দিতেন। 

এশিয়ান ট্র্যাকিংয়ের স্টিভেন শেরপার মতে, এই নিয়মগুলো এভারেস্ট অঞ্চলের জন্য নয়। এভারেস্টের জন্যও একটি টিআইএমএস কার্ড থাকার কথা। যদিও স্থানীয় পৌরসভা কয়েক বছর আগে এই নিয়ম প্রত্যাখ্যান করেছিল। পরিবর্তে, তারা তাদের নিজস্ব ফি নেয়, যা পরে ট্রেইল এবং অবকাঠামো বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয়। 

একটি গ্রুপে আন্তর্জাতিক ট্রেকারদের এক হাজার নেপালি রুপি (প্রায় ৭ ডলার) ফি দিতে হয়।

তাই যারা এভারেস্টের চারপাশে একক ভ্রমণ করতে চান, তাদের লুকলায় আলাদা মিউনিসিপ্যাল ফি দিতে হবে। এরপর শুধু সাগরমাথা জাতীয় উদ্যানের প্রবেশ ফি দিতে হবে। নেপালে একক ট্র্যাকিং খুবই সাধারণ, বিশেষ করে খুম্বু ট্রেইল থেকে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প এবং অন্নপূর্ণা অঞ্চলে। 

কেউ কেউ অন্নপূর্ণার দক্ষিণ দিকে বেস ক্যাম্পে সংক্ষিপ্ত ট্রেক করে, আবার কয়েকজন 'হার্ডকোর ট্রেকার' রা থরোং লা পাস অতিক্রম করে। এই ট্রেইলগুলো পরিষ্কার; থাকার জায়গা, খাবারের রেস্তরাঁ এমনকি ওয়াইফাই সুবিধা সম্পন্ন।

তাই যারা এভারেস্টের চারপাশে একক ভ্রমণ করতে চান, তাদের লুকলায় আলাদা মিউনিসিপ্যাল ফি দিতে হবে।

কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, নেপালের পর্যটন খাত কোভিড-১৯ আঘাত থেকে পুনরুদ্ধার করার পরে গত বছর ১৯ হাজার ৪১৫ একক ট্রেকার নিবন্ধিত হয়েছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি নিবন্ধ এই একক ট্রেকারদেরকে 'খরচ-সচেতন ভ্রমণকারী' হিসেবে বর্ণনা করে। 

কিন্তু লোকেরা কেবল অর্থ বাঁচানোর জন্য পাহাড়ের পথে একা ভ্রমণ করে না, অনেকে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা স্বাধীন অন্বেষণের জন্য একক ট্র্যাকিংও বেছে নেয়। তবে নেপালে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো কোনো একটি এজেন্সি দ্বারা পরিচালিত একটি গ্রুপের অধীনে ট্র্যাকিং করা।

নেপালের পর্যটন খাত কোভিড-১৯ আঘাত থেকে পুনরুদ্ধার করার পরে গত বছর ১৯ হাজার ৪১৫ একক ট্রেকার নিবন্ধিত হয়েছে।

নীলহরি বাস্তোলা জানান, সাধারণত একজন গাইড প্রতিদিন পর্যটকদের কাছ থেকে ২৫ থেকে ৫০ ডলার নেয়। তবে দীর্ঘ ও কঠিন ট্র্যাকিং রুটে এটি ১০০-২০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে, মধ্যস্থতা বা আলোচনার দরজা সবসময় খোলা থাকে।

ইত্তেফাক/ডিএস