বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ১৫ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

এ এক অন্যরকম শান্ত!

আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৩, ০৩:৫৮

কিছুদিন আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিয়ে সমালোচনা কিংবা ট্রলের প্রধান উপাদান ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। নানা রকম কটু কথাও বলা হতো তাকে নিয়ে। কেননা টাইগার দলে বারবার সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হচ্ছিলেন শান্ত। তবে হঠাৎ এমন কী হলো? ব্যাট হাতে উইকেটে প্রতি ম্যাচেই শান্ত জবাব দিচ্ছেন তাকে নিয়ে করা প্রতিটি সমালোচনার। গত শনিবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গড়া ইতিহাসেও তিনি রাখেন বড় ভূমিকা। দিনকে দিন শান্ত হয়ে উঠছে টাইগার ব্যাটিং অর্ডারে শক্তিশালী এক অস্ত্র।

এর আগে শান্তকে ঘরোয়া ক্রিকেটে কিংবা বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে আলো ছড়াতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সেগুলো ছিল তার কাছে অতীত। কারণ জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর থেকে সেইভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না তিনি। ভুগছিলেন ফর্ম হীনতায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভক্তদের কটু কথা আর সমালোচনার মধ্যমণি হয়ে ওঠেন তিনি। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা শান্তকে বারবার ব্যর্থ হওয়ার পরও তিন ফরম্যাটেই সুযোগ দিচ্ছিলেন নিজেকে প্রকাশ করার। তারা আস্থা রাখছিলেন এ তরুণ প্রতিভার ওপর। তবে বারবারই ব্যর্থ হয়ে উইকেট থেকে ফিরছিলেন শান্ত।

ব্যর্থ শান্তকে দলে নেওয়া হয়েছিল গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও। তাকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে দেখে রীতিমতো মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা হয় ক্রিকেট ভক্তদের। সেসময় সবার মনে একটাই প্রশ্ন জন্মায়, যে ব্যর্থ শান্ত কোন বিবেচনায় বিশ্বকাপের মত টুর্নামেন্টে দলে জায়গা পান। তখন ইমপ্যাক্টকে ঢাল করে শান্তের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীরাম শ্রীধরন। তবে এতে কাজ হয়নি,  ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ক্রিকেট সমর্থকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম শান্তকে নিয়ে করতে থাকে একের পর এক ট্রল, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ হতে থাকে। কখনো সেটা অতি আক্রমণ হয়ে ছাড়িয়ে গিয়েছে মাত্রাও। সেগুলো সবই দেখেছেন শান্ত। তবে সেগুলোকে গায়ে মাখেননি তরুণ এ ব্যাটার। কারণ তার কিছুই করার ছিল না। তিনি বুঝে নিয়েছিলেন, কিছু করতে হলে মাঠেই করে দেখাতে হবে। তিনি করলেনও তাই।

অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হওয়া সেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেন শান্ত। বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচ খেলে ৩৬ গড়ে করেন ১৮০ রান। তার মধ্যে হাঁকান দুই ম্যাচে ফিফটিও। পরে শান্তকে নিয়ে সেসময় দায়িত্বরত টাইগার দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা একজন ক্রিকেটার হবে শান্ত।’ তার ঐ কথা যেন দিনকে দিন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। শান্ত হয়ে উঠছেন দলের ভরসামান একজন ব্যটার ক্রিকেটার।

এদিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ সফরে আসে ভারত। প্রতিবেশী দেশের বিপক্ষে আবারও ব্যর্থ হন তিনি। তবে শান্ত নতুন রূপে ফিরে আসেন এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল)। টুর্নামেন্টটিতে শান্ত ব্যাট হাতে ছিলেন ধারাবাহিক। রানের পর রান করেন। গড়েন বিপিএল ইতিহাসে কোনো বাংলাদেশি খেলোয়াড় হিসেবে সর্বোচ্চ রান তোলার নজির। এছাড়া এবারের বিপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও ছিলেন শান্ত। টুর্নামেন্টটিতে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে ফাইনালসহ খেলেন ১৫টি ম্যাচ। তার মধ্যে হাঁকান ৪টি ফিফটি। তোলেন আসরের সর্বোচ্চ ৫১৬ রান। টুর্নামেন্টটি চলাকালীন শান্তকে নিয়ে সিলেটের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা মন্তব্য করেছিলেন, ‘শান্ত লম্বা রেসের ঘোড়া’। বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এই ছেলেটা বাংলাদেশকে অনেক কিছু দিতে পারবে।’ মাশরাফির সেই কথাই যেন দেখা যাচ্ছে বর্তমানে। বিপিএলের সেই ফর্ম যেন টেনে এনেছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে খেলা সিরিজে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা দুই সিরিজ মিলিয়ে ৫ ম্যাচে হাঁকিয়েছেন ৩টি ফিফটি। এছাড়া গত শনিবার ইতিহাস গড়া ম্যাচে পালন করেছেন দলের হয়ে গুরুদায়িত্ব, খেলেছেন ৪৬ রানের হার না মানা ইনিংস। এ তো গেল কেবল ব্যাটিংয়ের কথা। চলমান এ সিরিজে শান্তকে কখনো দেখা গিয়েছে বল হাতে, আবার দেখা গিয়েছে মাঠের সেরা ফিল্ডার হিসেবে। সব মিলিয়ে এ যেন এক অন্য শান্তকে দেখছে টাইগার ভক্তরা। যা কিনা কিছুদিন আগেও কেউ কল্পনা করতে পারেনি তাকে নিয়ে।

 

ইত্তেফাক/ইআ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন