ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় ফ্রেডির তাণ্ডবে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক ও মালাউইতে শতাধিক নিহত, বহু আহত এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড বহু এলাকা, বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি এবং উপড়ে গেছে গাছপালা। বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফ্রেডি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকা অতিক্রম করে। এর আগে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে প্রথমবার আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ফ্রেডি। গত সোমবার মোজাম্বিক ও মালাউই ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করছিল বলে জানা যায়। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, দক্ষিণ গোলার্ধে রেকর্ড হওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়গুলোর মধ্যে ফ্রেডি অন্যতম এবং এটি সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় হতে পারে।
জানা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক ও মালউইয়ে ঘূর্ণিঝড় ফ্রেডির আঘাতে এখন পর্যন্ত দেশ দুটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০ জনে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড বহু এলাকা, বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি এবং উপড়ে গেছে গাছপালা। বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঘূর্ণিঝড়ে মালাউই ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মাটি ধসে বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৯৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আরো ১৩৪ জন আহত এবং ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ রয়েছেন ১৬ জন। মালাউইয়ের বাণিজ্যিক রাজধানী ব্ল্যান্টাইরেই মারা গেছেন ৮৫ জন। দেশটি তার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ কলেরার প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে লড়াই করছে। গত বছর থেকে ১ হাজার ৬০০ জনের মৃত্যু হয় কলেরায়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মালাউইয়ে আরো দুর্দশা ডেকে এনেছে। প্রেসিডেন্ট লাজারাস চাকভেরা ‘দক্ষিণাঞ্চলের এই রাজ্যকে দুর্যোগের রাজ্য’ ঘোষণা করেছেন।
এছাড়া প্রতিবেশী দেশ মোজাম্বিকে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দেশটিতে আহত হয়েছেন আরো ১৪ জন। ঝড়টি শনিবার মোজাম্বিকের মধ্যাঞ্চলে তাণ্ডব চালিয়ে বহু ভবনের ছাদ উড়িয়ে নেয় এবং এর প্রভাবে দেশটির ক্যালেমানা বন্দরের আশপাশের এলাকায় ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়। এরপর এটি মালাউইর দিকে এগিয়ে গিয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণ হয়। এতে সেখানে ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। মোজাম্বিকের দুর্গত এলাকাগুলোর কিছু অংশ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে, সেখানে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও কাজ করছে না; ফলে এখানে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র এখনো পরিষ্কার হয়নি।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে মালাউইর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক বিভাগের কমিশনার চার্লস কালেম্বা জানিয়েছেন, ঝড়টির কারণে মালাউইতে ৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, এর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ও বাণিজ্যকেন্দ্র ব্লানটায়ারে নিহত ৮৫ জনও আছেন। চার্লস কালেম্বা বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। ডক্টরস উইথাউট বর্ডারস (এমএসএফ)-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যারিন পিচার টেলিফোনে জানান, সোমবার দুপুর পর্যন্ত ব্লানটায়ারের কেন্দ্রীয় হাসপাতালে অন্তত ৬০টি মৃতদেহ আসে। আহত প্রায় ২০০ জনকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, মূলত গাছ পড়ে, ভূমিধ্বসে এবং হড়কা বানেই বেশির ভাগ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশের মুখপাত্র পিটার কালায়া জানিয়েছেন, ব্লানটায়ারের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি এলাকা চিলোবি ও এনডিরানডে উদ্ধারকারী দলগুলো লোকজনের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। সোমবারও সেখানে বৃষ্টি হচ্ছিল এবং নগরীর বহু বাসিন্দা বিদ্যুিবহীন অবস্থায় ছিলেন। নিখোঁজ কিছু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে জানান কালায়া।