বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ১৫ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

রূপগঞ্জে কৃষকের কান্না

হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে কৃষিজমিতে আবাসন

আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৩, ০২:৩৩

রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও, টেকদাসেরদিয়া, তিনওলোপ, কালনী, বড় আমদিয়া, বৈলদা, হিরনাল মৌজার প্রায় চার শতাধিক তিন ফসলি জমিতে অবৈধভাবে বালি ভরাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে মেরিন সিটি নামক আবাসন প্রকল্প কৃষকদের জমিতে জোর পূর্বক বালি ভরাট করছে। তারা কৃষিজমি, সরকারি খাল, অর্পিত ও খাস জমি এবং গ্রামীণ সড়ক আবাসন প্রকল্পটি বালি ফেলে ভরাট করছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই হামলা মামলাসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কৃষকরা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আবেদন-নিবেদন করেও কোনো সুফল পাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দাউদপুর ইউনিয়নে বেশির ভাগ তিন ফসলি জমি। কোনো জমিতে শাকসবজি আবার কোন জমিতে চাষ করা হয়েছে ধান। ফলনও হয়েছে বেশ। এরই মধ্যে আবাসন প্রকল্পের বালু ভরাট কাজ চলছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, জমির নামমাত্র ওয়ারিশ ক্রয় করে কিংবা কিছু অংশ ক্রয় করে আশপাশের জমি রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালি ভরাটের কাজ চলছে। প্রতিবাদ করার কারো সাহস নেই, নীরবে কৃষকরা কাঁদছেন।

এ ব্যাপারে কৃষকরা উপায় না পেয়ে ২০২২ সালে ১২ জন কৃষক হাইকোর্টে রিট মামলা করেন। হাইকোর্ট ২০২৩ সালের ১২ মার্চ মেরিন সিটির সব কার্যক্রমে স্থিতি অবস্থায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু তারা হাইকোর্টের আদেশকে অমান্য করে কৃষকদের জমি জোরপূর্বক ভরাট করছে। এছাড়া মেরিন সিটি কৃষকের জমি দখলে নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে। শীতলক্ষ্যা নদীর তীর থেকে মেরিন সিটির প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে বালি ভরাটের পাইপ বসানো হয়েছে। একদিকে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অন্যদিকে পাইপ থেকে লিকেজ হয়ে ফসলি জমিতে বালি পড়ে স্তূপে পরিণত হচ্ছে। তাতে কৃষকরা মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন ।

দাউদপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক তমিজউদ্দিন রাজ বলেন, জমি না কিনেই কৃষকদের জমি ভরাট করা হচ্ছে। মেরিন সিটি স্থানীয় প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। এখানে কৃষকরা দিনদিন অসহায় হয়ে পড়ছে। কালনী এলাকার কৃষক সামসুদ্দিন ওরফে সুরুজ মিয়া বলেন, হিরনাল মৌজার তার ২৮ শতাংশ কৃষি জমি মেরিন সিটি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে বালি ভরাট করছে। বালির সঙ্গে আসা পানিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। টেকদাসেরদিয়া গ্রামের কৃষক ইদ্রিস আলী ও লোকমান হোসেন বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী ও মেরিন সিটির নিয়োজিত সন্ত্রাসীরা আবাসন প্রকল্পের পক্ষ নিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। 

মেরিন সিটির প্রকল্প পরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন,‘আমাদের কেনা জমিতেই বালি ভরাট করছি।’ হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে ফোন কেটে দেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল হক বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত তাদের কিছু করার নেই। নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/এমএএম