বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ১৫ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

'এভাবে দাম বাড়তে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে'

আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৩, ১৫:৩১

ক্রমশ বেড়েই চলেছে মাছ, মাংস, ডিম, সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম। রমজান উপলক্ষে বেড়েছে মুদি পণ্যের দামও। একই অবস্থা দেখা গেছে মুরগির বাজারেও। গত সপ্তাহের মতো ২৬০ টাকায় ব্রয়লার বিক্রি হলেও কিছুটা বেড়েছে পাকিস্তানি কর্ক ও দেশি মুরগির দাম। ফলে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।

শুক্রবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, রমজানের আগে বাড়তে শুরু করেছে সবজির দাম। বাজারভেদে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়, শিম ৫০-৬০ টাকা, পটল ৬০-৮০ টাকা, টমেটো ৪০-৫০ টাকা, বেগুন ৬০-৯০ টাকা, চিচিংগা ৬০-৮০ টাকা ও ঝিঙ্গা ৬০-৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া বাজারে লাউ প্রতি পিসি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ টাকায় এবং মিষ্টি কুমড়া প্রতি ফালি ২০-৪০ টাকা দরে। কমেনি লেবুর দামও। প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা দরে। এছাড়া কাঁচামরিচ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়, ফুলকপি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, বাঁধাকপি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।

সবজি বিক্রেতা কামরুল হোসেন বলেন, শীতকালীন সবজি শেষ হয়ে যাওয়া এবং অনেক সবজির ক্ষেতে ধান চাষ করার কারণে উৎপাদন কমে গেছে। সবজির সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়তি।

সবজির দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত রয়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। তবে কিছুটা বেড়েছে পাকিস্তানি কর্ক ও দেশি মুরগির দাম। বাজারভেদে পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০-৩৮০ টাকায়। প্রতি কেজি বড় কর্ক মুরগি কিনতে গুণতে হচ্ছে ৩২০-৩৬০ টাকা। এদিকে দেশি মুরগির দাম প্রতি পিস (৮০০-৯০০ গ্রাম) ৫০০-৫৫০ টাকা।

মুরগির মতো বেড়েছে মাছের দামও। আকারভেদে প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৫০০ টাকায়। দেশি জলাশয়ের মাছের দাম ৮০০-১০০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ইলিশ মাছ এক হাজার ৩৫০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

এদিকে মাছ, মুরগির মতো গরুর মাংসও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। আজ প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। অন্যদিকে ছাগলের মাংস ৯০০ টাকা এবং খাসির মাংস এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সপ্তাহের বাজার করতে আসা আনোয়ার হোসেন বলেন, 'নিত্যপণ্যের দাম জিজ্ঞেস করতে ভয় হয়! প্রতিদিনই দাম বাড়ে, আমাদের বেতনতো বাড়ে না। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি, এভাবে দাম বাড়তে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে। জানিনা এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে কবে?

রোজাকে সামনে রেখে বাড়তে শুরু করেছে মুদি পণ্যের দামও। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি খোলা চিনি ১১৫-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মসুর ডাল ১৩৫-১৫০ টাকা, খেসারি ডাল ৮০-৯০ টাকা, অ্যাংকরের বেসন ৭৫-৮৫ টাকা এবং বুটের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। তবে কিছুটা কমেছে ছোলার দাম। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯৫ টাকা। যা আগে ৯০-১০০ টাকা ছিলো।

এদিকে জনসাধারণের নাগালের বাইরে রয়েছে ফলের দাম। রোজা সামনে রেখে এ দাম আরও বাড়ছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, আপেল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। যেখানে গত মাসেও বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকায়। ভালো মানের আমদানি করা গোল্ডেন আপেল বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকায়। এছাড়া ফুজি আপেল কিনতে গুণতে হচ্ছে ৩০০ টাকা, গালা আপেল ৩৫০ টাকা।

একই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খেজুরের দাম। মোটামুটি ভালো মানের খেজুর কিনতেও গুণতে হচ্ছে সর্বনিম্ন ৪০০ টাকা। আমিরাতের নাগাল, দাবাস ও লুলু খেজুরের দাম ছাড়িয়েছে ৬০০ টাকা। সৌদি আরবের আজোয়া, আম্বার কিংবা জর্ডানের মরিয়ম খেজুর কিনতে হলে গুণতে হচ্ছে হাজার টাকা কিংবা তারও বেশি।

অসুস্থ মায়ের জন্য ফল কিনতে আসা মামুন ইকবাল জানান, 'ঘরে মা অসুস্থ, ভাত খেতে পারে না তাই ফল কিনতে এসেছি। কিন্তু ফলের দাম শুনেই তো হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অবস্থা। এক কেজি করে নেওয়ার ক্ষমতা নেই তাই দুই-একটা করে ফল নিচ্ছি'।   
 
ফল বিক্রেতারা জানান, সবচেয়ে কম দামের ফল হচ্ছে পেয়ারা। যা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা। অন্যদিকে নাশপাতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা, পাকা পেঁপে ৯০- ১০০ টাকা, মাল্টা ২২৪- ২৫০ টাকায়। আঙুর বিক্রি হচ্ছে ২৪০-৩০০ টাকায়। লাল আঙ্গুরের দাম আরও চড়া। কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকায়। ডালিম ৪৫০-৪৮০ ও কমলা (ভারতীয়) ২৪০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে কলার দামও বেশ চড়া দেখা গেছে। প্রতি ডজন সবরি কলা মিলছে ১২০ টাকায়। চাপা কলা ৬০-৮০ টাকায়, সাগর কলা ৮০-১২০ টাকায়।

বাজারে প্রচুর তরমুজ দেখা গেলেও দাম নিয়ে রয়েছে ক্রেতাদের অসন্তোষ। প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। সস্তায় মিলছে ছোট-বড় আনারস। ছোট আকারের আনারস পাওয়া যাচ্ছে ৩০-৫০ টাকায়।

ইত্তেফাক/আর