শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

করোনার প্রভাব: বেড়েছে হাসপাতালে ভর্তির হার

কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ তীব্র অপুষ্টি

আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৩, ০৮:০০

দেশে শিশুর তীব্রতম অপুষ্টির প্রকোপ বাড়ছে। একই সঙ্গে বেড়েছে তীব্র অপুষ্টিতে (সিভিয়ার অ্যাকিউট ম্যালনিউট্রিশন) আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশের হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসা নিতে আসা তীব্রতম অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা বেড়েছে আগের বছরের তুলনায় ৭২ শতাংশেরও বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিডের কারণে সাধারণ মানুষের অনেকেই কর্মসংস্থান হারিয়েছে। অনেকের আয় একেবারে কমে গেছে। জীবিকা নির্বাহে যতটুকু না খেলেই নয়, ততটুকু খেয়ে জীবন ধারণ করছেন অনেকে। ফলে প্রয়োজনীয় পুষ্টির বিষয়টিতে তারা আপস করতে বাধ্য হয়েছেন। এরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে। তারা আরও বলছেন, দেশে শিশুর অপুষ্টি এখনো মারাত্মক একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে রয়েছে। বিশ্বব্যাপী তীব্রতম অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যার দিক থেকে এখনো ওপরের তালিকায় বাংলাদেশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, মারাত্মক তীব্র অপুষ্টি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের অসুস্থতা ও মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। সারা বিশ্বে প্রায় ২ কোটি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়। আর ১০ লাখের মতো শিশুর মৃত্যু হয়। এসব শিশুর অধিকাংশই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বাসিন্দা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশের হাসপাতালগুলোয় তীব্রতম অপুষ্টিতে ভোগা শিশু ভর্তি হয়েছে আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ২০২১ সালে এসএএমে ভোগা শিশু ভর্তি হয়েছে ১১ হাজার ৩১৩ জন। যেখানে আগের বছর ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৫৭০। অপুষ্টিকে দেখা হয় শিশুর শারীরিক ও মানসিক উন্নতির সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে। 

সারা দেশে শিশুদের তীব্রতম অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যার দিক থেকে এখন চট্টগ্রাম বিভাগ শীর্ষে রয়েছে। বিভাগটিতে শিশুর সিভিয়ার অ্যাকিউট ম্যালনিউট্রিশনে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গত বছর এখানকার ২ হাজার ৬১৩টি শিশু তীব্রতম অপুষ্টির চিকিৎসা নিয়েছে। এছাড়া ঢাকায় প্রায় ২ হাজার ৪৬০, খুলনায় ১ হাজার ৩২৮, বরিশালে ১ হাজার ২৫৬, রাজশাহীতে ১ হাজার ২২২, ময়মনসিংহে ৭৪৩ ও রংপুরে ৭১১ শিশু ভর্তি হয়েছে।

সরকারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে অপুষ্টিজনিত কৃশকায় শিশুর হার ২০১৭ সালে ছিল ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৯ সালে তা বেড়ে ৯ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে খর্বকায় শিশুর হার ঐ বছর ছিল ২৮ শতাংশ। উচ্চতা অনুযায়ী তীব্রতম অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর হার ২ শতাংশ।

জাতীয় পুষ্টি সেবার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এ টি এম রিয়াজ উদ্দিন বলেন, একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, অপুষ্টিতে আক্রান্ত একটি শিশুর উপার্জনের সক্ষমতা প্রায় ১০ শতাংশ কমে যায়। অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশু খুব সহজেই অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এক জন অপুষ্ট মা সঠিক যত্ন ও সেবার অভাবে একটি অপুষ্ট শিশুর জন্ম দেয় এবং ঐ শিশুটি ধীরে ধীরে অপুষ্ট শিশু হয়ে বেড়ে উঠে, শিশুটি যদি মেয়ে শিশু হয় তবে সেই মেয়ে শিশুটি পরবর্তী সময় আবার আরেকটি অপুষ্ট শিশুর জন্ম দেবে। এভাবেই সে অপুষ্ট চক্রের মধ্যে ঘুরতে থাকবে। এ কারণে অপুষ্ট শিশু শনাক্তকরণ চিকিৎসা খুবই জরুরি।

জাতীয় পুষ্টি সেবার লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত অনেক শিশু কোনো চিকিৎসা না পেয়ে বাড়িতেই মারা যায়। আবার অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হলেও মানসম্মত চিকিৎসা না পেয়ে জটিলতার সম্মুখীন হয়। অপুষ্টির চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা এবং অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় পার্থক্য রয়েছে। সাধারণভাবে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক চিকিৎসা বা ব্যবস্থাপনা সঠিক হলেও তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে তা জটিলতার সৃষ্টি করে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। অন্যদিকে সঠিক ও মানসম্মত চিকিৎসা যদি নিশ্চিত করা যায়, তবে অপুষ্ট শিশুদের কোনো জটিলতা হবে না, মৃত্যুর হারও কমবে।

ইত্তেফাক/এমএএম