রমজানের আগেই দফায় দফায় বাড়ছে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এর আগে ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানিকৃত পণ্যের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চাল, চিনির শুল্ক কমানো হয়েছে, কিন্তু এর প্রভাব খুব কমই পড়েছে বাজারে। আমদানি শুল্ক কমানো হলেও সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর রয়ে গেছে আগের মতোই। ফলে বিশ্ববাজারে কিছুটা কমে এলেও দেশের বাজারে সুফল মিলছে কমই।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানির ওপর থেকে ৩ হাজার টাকা এবং প্রতি টন পরিশোধিত চিনির ওপর থেকে ৬ হাজার টাকা শুল্ক প্রত্যাহার করে। এ ছাড়া, চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রক শুল্ক ৫ শতাংশ কমানো হয়। কিন্তু বাজারে চিনির দাম কমার পরিবর্তে উলটো বেড়ে গেছে। খোলা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। ৫ শতাংশ কমানো হলেও এখনো চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রক শুল্ক রয়েছে ২৫ শতাংশ।
একইভাবে চাল আমদানি বাড়াতে কয়েক দফায় শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু এর প্রভাব খুব কমই পড়তে দেখা যায়। কারণ শুল্ক কমানোর পরেও গড়ে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আমদানি করতে হচ্ছে চাল। এর মধ্যে আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ, অগ্রিম কর ৫ শতাংশ এবং অগ্রিম আয় কর দিতে হচ্ছে আরো ৫ শতাংশ। ভুট্টা আমদানি করতে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট, অগ্রিমকরসহ পাঁচ ধরনের করে দিতে হচ্ছে ৬৭ শতাংশ কর। অপরিশোধিত পাম তেলে আমদানি পর্যায়ে গুণতে হচ্ছে ২০ থেকে ৩২ শতাংশ কর।
দেশের বাজারে এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার জন্য ব্যবসায়ীরা আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিকে দুষছেন। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও এর কারণে পণ্যের কর বেড়ে যাওয়ার কথাও বলছেন তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্য আমদানি সময়সাপেক্ষ। বিশ্ববাজারে কিছুটা কমলেও, কম দামের পণ্য এখনো দেশে এসে পৌঁছায়নি। এ সুফল ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে আরো সময় লাগবে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম এখন কমতির দিকে। কিন্তু দেশের বাজারে প্রভাব পড়ছে না।
ডলারের দাম বৃদ্ধির প্রভাবও রয়েছে দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে। ৮৬ টাকার ডলার এখন ১০৪ টাকায় উঠেছে। খোলাবাজারে এর দাম ১২০ টাকায়ও ছাড়িয়ে যায়। এর প্রভাবে আমদানিকৃত নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে হু হু করে। ডলার-সংকটে পণ্য আমদানি করতেও হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। নিত্যপণ্য আমদানিতে স্বল্প মার্জিনে এলসি খোলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পর্যাপ্ত এলসি খুলতে পারছে না। শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শতভাগ মার্জিন রেখেও এলসি খোলা যাচ্ছে না এমন অভিযোগও রয়েছে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। পর্যাপ্ত এলসি খোলা সম্ভব না হওয়ায় সময়মতো পণ্য আসছে না দেশে। সেইসঙ্গে জ্বালানির সংকট রয়েছে। পর্যাপ্ত গ্যাস না থাকায় উৎপাদন কার্যক্রমও ক্ষতি হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে পণ্যের বাজারে।
নিত্যপণ্যে বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি, ডিম, পেঁয়াজ, আটার দাম আরো এক দফা বেড়েছে। এছাড়া আগে থেকেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্য তেল, ময়দা, চিনি, ছোলাসহ বিভিন্ন পণ্য।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত এক বছরের ব্যবধানে কোনো কোনো পণ্যের দাম ১০ শতাংশ থেকে ৯০ দশমিক ৯১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে এবার নিত্যপণ্যের বাড়তি দরের চাপ নিয়েই ভোক্তাদের রমজান শুরু করতে হবে। ভোক্তারা জানিয়েছেন, যেভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে, তাতে রমজানে তাদের বিপাকে পড়তে হবে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২৫০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৩০ টাকা থেকে ৩৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, গত এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ৫ টাকা বেড়ে দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা, আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, খোলা সাদা আটার কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা ও প্যাকেট আটা ২ টাকা বেড়ে ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি হালি ডিম ২ টাকা বেড়ে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা হালিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। রমজানে ইফতারি তৈরিতে ব্যবহৃত ছোলা, অ্যাংকর ডাল, বেসন, চিনির দামও ইতিমধ্যে বেড়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনিতে ৫ টাকা বেড়ে ১১৫ টাকা, ছোলায় ৫ টাকা বেড়ে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ও বেসন ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।