স্বামী ও স্ত্রী দুজনই সরকারি চাকরিজীবী। শুক্র ও শনিবার ছুটি থাকায় তারা প্রায়ই নিজ বাড়ি বাগেরহাট শহরে যান। তবে এ সপ্তাহে দুজন নয়, স্ত্রীকে রেখেই গ্রামের বাড়িতে একাই যান ৫৫ বছর বয়সী অনাদি রঞ্জন মজুমদার। রোববার (১৯ মার্চ) সকালে ঢাকায় একটি প্রশিক্ষণে যোগ দিতে গোপালগঞ্জ থেকে বাসে ওঠেন তিনি। পথে মাদারীপুরের শিবচরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।
অনাদি রঞ্জন মজুমদার গোপালগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক (ডিডি)। তার স্ত্রী অনিতা দত্ত ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষক।
দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ওই দিন বেলা ১১টার দিকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন অনিতা দত্ত। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছেলে অর্ণব মজুমদার। স্বামীর লাশ শনাক্তের পর ভেঙে পড়েন তিনি।
আহাজারি করতে করতে অনিতা দত্ত বলেন, সকালেও ফোনে কথা হলো। বলল, ঢাকায় ট্রেনিং শেষ করে আজই ফিরে আসবেন। এমন হবে জানলে ঢাকায় যেতে দিতাম না। আমার সুখের সংসারে আর সুখ রইল না।
তাছাড়া বাবার এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছেন না ছেলে অর্ণব। তিনি বলেন, কিছু বলতে পারছি না আমি। বাবার চেহারা দেখার পর দম বন্ধ হয়ে আসতেছে। ঈশ্বর আমাকে এমন দিন দেখাল কেন?
পুলিশ জানায়, রোববার (১৯ মার্চ) সকালে খুলনা থেকে যাত্রী নিয়ে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। পদ্মাসেতুর আগে ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় বাসটির সামনের একটি চাকা ফেটে যায় এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ১৪ জন নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় অন্তত ২৯ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুজন ও শিবচরের বিভিন্ন হাসপাতালে চার জনের মৃত্যু হয়েছে।