শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

মুরগির পা খাওয়ার পরামর্শ মিসর সরকারের

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৩, ১৬:৪৩

ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে মিসর । সেখানকার অনেক মানুষ পরিবারের জন্য প্রতিদিনের খাবার পর্যন্ত জোগাড় করতে পারছে না।  এই পরিস্থিতিতে জনগণকে মুরগির পা রান্না করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে দেশটির সরকার। পুষ্টি ঘাটতি পূরণের জন্য এই পরামর্শ দেন তিনি। খবর বিবিসি।  

‘‘হা সৃষ্টিকর্তা, আমাদের মুরগির পা খাওয়ার মতো অবস্থায় নিয়ে ফেলো না”-মিসরের গিজা মার্কেটে পোল্ট্রি মুরগি বিক্রেতার পাশে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি এভাবেই সৃষ্টিকর্তার  কাছে প্রার্থনা করছিলেন। 

মুরগির পা উচ্চ-প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। কিন্তু মিসরে সাধারণত লোকজন মুরগির পা খায় না, ফেলে দেয়। সেগুলো রাস্তার কুকুর-বিড়ালের খাবারে পরিণত হয়। সেই মুরগির পা খাওয়ার সরকারের পরামর্শ জনমনে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

সেখানে রান্নার তেল এবং পনিরের মতো সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের রান্নার প্রধান উপকরণও তাদের জন্য বিলাসিতা হয়ে গেছে। মিসরের বেশিরভাগ মানুষ এসব পণ্য কেনার সক্ষমতা হারিয়েছেন। মাত্র কয়েক মাসে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হয়ে গেছে।

টানা দুই বছর কোভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কার পরপরই ইউক্রেইন যুদ্ধ, পুরো বিশ্বের অর্থনীতিই এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হু হু করে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। মূল্যস্ফীতি আকাশছোঁয়া। মার্চ মাসে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশের সামান্য ওপরে রয়েছে। মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় সবচেয়ে ভুগতে থাকা দেশগুলোর একটি মিসর ।

তিন সন্তানের মা উইদাদ(৬০)  বিবিসি-কে বলেন, `আমি হয়ত মাসে একবার মাংস খেতে পারি, অথবা আমি এটা একদমই কিনতে পারছি না। সপ্তাহে একবার মুরগি কিনি। এখন তো একটি ডিমের দামও ৫ মিসরীয় পাউন্ড (০.১৬ মার্কিন ডলার) হয়ে গেছে।'

এক বছর আগেও উইদা তার মাসিক অবসরভাতা পাঁচ হাজার মিসরীয় পাউন্ড দিয়ে বেশ সাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারতেন। ‍তিনি নিজেকে তাই মধ্যবিত্ত বলতেন। কিন্তু মিসরের অনেক নাগরিকের মতো তাকেও এখন মাস শেষে বাজারের হিসাব মেলাতে লড়াই করতে হচ্ছে। তাই এখন মুরগি কেনার অর্থ জোগাড় করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘‘একজন বিক্রেতা মুরগির হাড় ছাড়া মাংস এক কিলো ১৬০ মিসরীয় পাউন্ড বলছে। বাকিরা তো ১৭৫, ১৯০ এমনকি ২০০ মিসরীয় পাউন্ডও চাইছে। মুরগির পা বিক্রি হচ্ছে ৯০ মিসরীয় ‍পাউন্ড কিলো। এমনকি মুরগির হাড় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। মুরগির পায়ের দাম ২০ মিসরীয় পাউন্ড।”

মিসরের জনসংখ্যা ১০ কোটির বেশি। অভ্যন্তরীণ কৃষি নয় বরং দেশটি মারাত্মকভাবে আমদানি করা খাদ্যপণ্যের উপর নির্ভরশীল। যা সেখানে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে।

এমনকি পোল্ট্রি মুরগির খাবারও মিসর আমদানি করে। গত ১২ ‍মাসে মিসরীয় পাউন্ডের মূল্যমান ডলারের বিপরীতে অর্ধেকে নেমে এসেছে। তাই যখন জানুয়ারিতে দেশটির সরকার আবার মূ্দ্রার অবমূল্যায়ন করে, তখন শস্যের মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ পণ্যের আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।

মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল-সিস অবশ্য অর্থনৈতিক এ সংকটের জন্য কয়েকবারই ২০১১ সালের আরব বসন্তের জেরে সেদেশে হওয়া বিক্ষোভ এবং জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন। কোভিড-১৯ মহামারী ও ইউক্রেইন যুদ্ধকেও দায়ী করেছেন তিনি।

মিসর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ গম আমদানিকারক দেশ। তাদের গমের বেশিরভাগ জোগানই আসতো ইউক্রেইন ও রাশিয়া থেকে। ইউক্রেইন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বেই গম ও গমজাত পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেইনের নাগরিকদের কাছে বেড়ানোর জনপ্রিয় স্থান ছিল মিসর । ফলে যুদ্ধের কারণে মিসরের পর্যটন খাতেও ভাটার টান পড়েছে।

মিসরে জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি আসে পর্যটন খাত থেকে। মহামারীতে যা আগেই বিধ্বস্ত ছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি যতটা না খারাপ, তার থেকেও বেশি খারাপ হয়েছে সরকারের কিছু ভুল পদক্ষেপের কারণে।

অতীতে মিসরে  যখনই অর্থনৈতিক সংকট বেড়েছে, তখনই দাঙ্গা হয়েছে। সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক ও মোহাম্মেদ মোরসির পতন এভাবেই হয়েছে।

বর্তমানে দেশটিতে যে অর্থনৈতিক সংকট চলছে, তাতে জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে। যে ক্ষোভ পুরো দেশে বিক্ষোভের আগুন জ্বালাতে পারে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট সিসির উপর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে।

ইত্তেফাক/এফএস