শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সমুদ্রে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপায় খুঁজছে সরকার

আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৩, ০৮:০৩

বঙ্গোপসাগরে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়েছে। যাচাইয়ের ফলাফল ইতিবাচক হলে সমুদ্রের মধ্যবর্তী এলাকায় বায়ুবিদ্যুৎ টারবাইন স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে কোনো বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু নেই। কক্সবাজারের কুতুবদিয়া এবং ফেনীর সোনাগাজীতে ছোট আকারে দুটি প্রকল্প আগে শুরু হলেও বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এদিকে এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত বা বাস্তবায়নাধীন বড় আকারের সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বেশির ভাগই নদী বা সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় নির্মিত হয়েছে বা হচ্ছে। আগামীতে সমুদ্রের তীর থেকে দুই-চার কিলোমিটার গভীরে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপায় খুঁজছে সরকার। দেশে জমি স্বল্পতার কারণে এ পথে হাঁটা শুরু হয়েছে। তবে পরিবেশ, মাছের বংশবিস্তার-চলাচল-আহরণ এবং জাহাজ চলাচলে যেন ক্ষতি না হয় তা বিবেচনায় নিয়ে এ ধরনের বায়ুকলগুলো স্থাপন করা হবে। এছাড়া সমুদ্রের তলদেশ টারবাইন স্থাপনে উপযোগী কিনা এবং কেন্দ্রের কাছাকাছি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ-সম্প্রসারণের উপযোগিতাও বিবেচনা করা হবে। সমুদ্রের মধ্যভাগে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য সম্প্রতি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এগুলো হলো—ইতালির সিইএসআই, নেদারল্যান্ডের ব্লিক্স এবং বাংলাদেশের সাইনোটেক ও এসএস সল্যুশন্স। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই এবং বিস্তারিত সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ শুরু করেছে। ১০ মাসের মধ্যে যাচাই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পে সরকার ২৩ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করেছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংক্রান্ত মহাপরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এর মধ্যে ২০৩০ সালে ৩ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালে ৪০ শতাংশ বা ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্বায়ু থেকে উৎপাদন করার প্রাথমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তাই জ্বালানি মিশ্রণে ভারসাম্য রক্ষার জন্য জলবিদ্যুৎ ও সৌরবিদ্যুতের পর এখন বায়ুবিদ্যুতে জোর দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ল্যাবরেটরি (এনআরইএল) ২০১৮ সালে এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশে দৈনিক গড়ে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্বায়ু থেকে উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ১৮ বছরে সরকার বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের সব সুযোগ ব্যবহার করতে চায় সরকার। দেশে বায়ুকল নির্মাণের আটটি প্রকল্প বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন বা পরিকল্পনাধীন রয়েছে। নির্মাণ সম্পন্ন হলে এগুলোর সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়াবে ৩৫৭ মেগাওয়াট। চলতি বছরের জুনে কক্সবাজারে নির্মাণাধীন ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সমুদ্রের মধ্যভাগে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সম্ভাব্যতা যাচাই বিষয়ে গত ১ মার্চ একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সভায় জানানো হয়, প্রকল্পটি দুটি পর্বে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই অংশে বায়ুবিদ্যুৎ উত্পাদনে সমুদ্রে ব্লক চিহ্নিত করা হবে। আর বিস্তারিত সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় সমুদ্রে অন্তত দুটি স্থান চিহ্নিত করা হবে যেখান থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা গ্রিডে বা গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া যায়।

ঐ সভায় বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান জানান, সমুদ্রে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উপায়ে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন করার ব্যাপারে সরকার আগ্রহী। এতে প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগ বেশি। তবে দীর্ঘ মেয়াদে সুফল রয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ ১০ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। সম্ভাব্যতা যথাযথভাবে যাচাই করতে হবে যেন বিনিয়োগ করা হলে তা সুরক্ষিত থাকে।

এ জরিপ কাজের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এসএস সল্যুশন্সের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ জালালউদ্দিন বলেন, মূলত সেকেন্ডারি উৎস বা ইতিমধ্যে প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের এনআরইএল, বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), বন্দর কর্তৃপক্ষসহ দেশিবিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকে তথ্য নিয়ে তা বিশেষজ্ঞরা বিশ্লেষণ ও যাচাইবাছাই করবেন। প্রতিবেদনে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রযুক্তি, আর্থিক ও বাণিজ্যিক বিশ্লেষণ, পরিবেশের ওপর সম্ভাব্য প্রভাবসহ বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ থাকবে।

 

ইত্তেফাক/ইআ