সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

চার বছর ধরে বন্যার সঙ্গে লড়াই করছে দক্ষিণ সুদান

আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৩, ০৯:৪১

তীব্র খরা, কয়েক মাস ধরে বৃষ্টি নেই। কিন্তু বন্যাকবলিত অবস্থায় রয়েছে দক্ষিণ সুদান। একদিন বা দুই দিন নয় টানা চার বছর ধরে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে দক্ষিণ সুদানের এ অবস্থা হয়েছে। দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফ্রান্স-২৪ এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।  

প্রতিবেদনে বলা হয়, হাজার হাজার মানুষ পানিতে আটকা পড়ে আছে এবং খুব কষ্টে বেঁচে আছে। তবে, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা উত্তরাঞ্চলের শহর বেনটুতে, যেখানে আজ জমি শুকনো থাকলে কাল তা পানির নিচে চলে যায়। বুধবার (২২ মার্চ) বিশ্ব পানি দিবসে দক্ষিণ সুদানের জনজীবনের এই অমানবিক দৃশ্য তুলে ধরেছে এএফপি। 

কিন্তু বন্যাকবলিত অবস্থায় রয়েছে দক্ষিণ সুদান।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) গবেষণা মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণের প্রধান উইলিয়াম নাল জানিয়েছেন, বেনটু মূলত এখন একটি দ্বীপে পরিণত হয়েছে। রাস্তাঘাট ভেসে গেছে। পানি কখনও বুক সমান, কখনও হাঁটু সমান। প্রধান ফসল শস্য, উদ্ভিজ্জ তেল ও চিনাবাদাম পেস্ট (যা কলের পানি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়) উৎপাদন প্রভাবিত হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, দেশের অন্য কোথাও এখানকার মতো বন্যার রেকর্ড নেই।

সংস্থাটি আরও জানায়, নীল নদের অববাহিকায় অবস্থিত দক্ষিণ সুদানের ১০ লাখ মানুষ বছরের পর বছর ধরে বন্যায় আক্রান্ত। দেশের মোট ৭ কোটি ৭০ লাখ মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ নেই। লক্ষ লক্ষ গবাদি পশু মারা গেছে। আবাদি জমির ১০ শতাংশ জলাভূমিতে পরিণত হয়েছে।

বেনটু মূলত এখন একটি দ্বীপে পরিণত হয়েছে।
 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুদানের কিছু এলাকায় বন্যার পানি বছরের পর বছর এমনকি কয়েক দশক ধরে কমতে পারে না। স্থানীয় বাসিন্দা ডুওপ ইয়ান জানান, মানুষ প্রতিদিন স্থানান্তর হওয়ার চেষ্টা করছে। কারণ বেনটু দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।

এএফপির একটি স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, জানুয়ারিতে শুকনো একটি অঞ্চল বন্যার এক সপ্তাহের মধ্যে তিন হাজার বর্গ কিলোমিটার (এক হাজার ১৬০ বর্গ মাইল) পর্যন্ত ডুবে গিয়েছিল। 

সুদানের কিছু এলাকায় বন্যার পানি বছরের পর বছর এমনকি কয়েক দশক ধরে কমতে পারে না।

২০ হাজার মানুষের সেবা করে এমন একটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে পরিদর্শন করে এএফপি জানায়, সেখানে মাত্র ১০ জন কর্মী ছিলেন। এছাড়াও, একটি তাঁবুর ভেতরে তিনজন নারী একটি একক বিছানা ভাগ করে থাকছেন।

আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ জানায় (আইসিজি), বন্যার কারণে ঘাস না পেয়ে গবাদি পশু পালনকারীরা তাদের গবাদি পশু দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছেন।

দক্ষিণ সুদান জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতার চিত্র তুলে ধরেছে।

থিংক ট্যাঙ্ক সতর্ক করে জানিয়েছে, দক্ষিণ সুদান জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতার চিত্র তুলে ধরেছে। যারা ধনী দেশগুলোর আর্থিক সহায়তা ছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। কিন্তু বর্তমানে অনুদানের ঘাটতি রয়েছে। ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ধনী দেশগুলো তাদের সহায়তা বাজেট কমিয়ে দিয়েছে।

ইত্তেফাক/ডিএস