শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

আর্জেন্টিনার উৎসবের মাঝে একটুখানি ফুটবল!

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৩, ০১:০৫

কথা ছিল, রাজপথ ধরে এগিয়ে চলবে বিশ্বজয়ীদের গাড়ি। দেশের মানুষের সঙ্গে আনন্দের মুহূর্ত ভাগাভাগি হবে। তবে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) সম্ভবত ধারণা ছিল না কী হতে যাচ্ছে। ৩৬ বছর পর যাঁদের অপেক্ষা শেষ হয়েছে, তাঁদের বাঁধভাঙা আবেগে কি আর নিরাপত্তা বেষ্টনী টিকে? অগত্যা কী আর করার! বিমানবন্দর থেকে লিওনেল মেসিদের উড়িয়ে আনা হয় হেলিকপ্টারে। বলা হচ্ছে, দেশে ফিরে বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টিনা দলের প্রথম অভিজ্ঞতার কথা।

কাতারে বিশ্বকাপ জেতার পর থেকেই উৎসব শুরু আর্জেন্টিনায়। রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সের ঐতিহাসিক ‘আভেনিদা নাইন দে জুলিও’ স্তম্ভের সামনে নামে মানুষের ঢল। তিল ধারণের জায়গা নেই। সেদিন ৫০ লাখ মানুষ নেমেছিলেন আর্জেন্টিনার রাস্তায়। বিশ্বজয়ের উল্লাস তাঁদের চলেছে দিন গড়িয়ে গভীর রাত পর্যন্ত। তারপর মেসিরা ট্রফি নিয়ে দেশে ফেরার পর সেই উৎসবের ঢেউ আরও বাড়ে। মাঝে কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবার আর্জেন্টিনায় ফিরেছে বিশ্বকাপ-পার্টি।

সেটা কীভাবে? আন্তর্জাতিক ফুটবল বিরতিতে তিন তারকার আর্জেন্টিনা খেলবে দুটো প্রীতি ম্যাচ। পানামার পর প্রতিপক্ষ কুরাকাও। দুটো ম্যাচই দেশের মাটিতে। সেই লক্ষ্যে মেসিরা আর্জেন্টিনায় পা রাখতেই ভক্তদের সে কী উন্মাদনা। বিমানবন্দর, হোটেল, রেস্টুরেন্ট- মেসিরা যেখানেই যাচ্ছেন, ভিড় জমাচ্ছেন ফুটবলপ্রেমীরা। অবশ্যই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে মেসি। তাঁর হাত ধরেই যে তিন দশক পর ‍মুক্তি মিলেছে। লাতিন দেশটিতে আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছেন তিনি কাতারে বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরে।

মেসির নেতৃত্বে সেই দলটিই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথমবার মাঠে নামতে যাচ্ছে। প্রতিপক্ষ উত্তর আমেরিকার দেশ পানামা। শক্তি বিবেচনায় তারা এমনিতেই পিছিয়ে। তার ওপর আবার গিয়েছে দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে। ফুটবলপাগল আর্জেন্টাইনদের এসব নিয়ে ভাবার সময় কোথায়! মেসিদের সঙ্গে আরেকবার বিশ্বকাপ জয়ের উৎসব করতেই তাঁদের যত আয়োজন।

রিভার প্লেটের মাঠ স্তাদিও মনুমেন্তাল তাই সেজেছে অন্যভাবে। ৮৩ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এই স্টেডিয়ামেই পানামার বিপক্ষে নামবে আর্জেন্টিনা। এএফএ টিকিট ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সব টিকিট শেষ! মেসিদের একটু সামনে থেকে দেখার আকুতি যে সব আর্জেন্টাইনের। স্তাদিও মনুমেন্তালের খেলা স্রেফ উপলক্ষ মাত্র। এখানে মূলত হতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনার জনগণের সঙ্গে মেসিদের আরেকটি মিলনমেলা।

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোরে শুরু হতে যাওয়া এই ম্যাচের আয়োজনের দিকে একটু তাকান। তাহলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে। স্তাদিও মনুমেন্তালে ম্যাচ শুরুর আগেই ডিজে পার্টির বিশাল আয়োজন। তারপর ব্যান্ড সংগীতের তালে উৎসবে আরেকটু রঙ লাগানো। এরই একফাঁকে দেখানো হবে কোচ লিওনেল স্কালোনি ও তাঁর দলের ওপর তৈরি ডকুমেন্টরি। ম্যাচের বিরতিতে আবার ব্যান্ড সংগীত। তারপর রেফারি শেষ বাঁশি বাজাতেই বিশ্বকাপ ট্রফির প্রদর্শনী। একদিকে মেসিদের হাতে সোনার ট্রফি, অন্যদিকে গ্যালারিতে আনন্দের ধ্বনি; সঙ্গে বুয়েনস আয়ার্সের আকাশে আতশবাজির বৃষ্টিতে কী চমৎকার দৃশ্যই না ফুটে উঠবে!

হ্যাঁ, সূচিতে লেখা আছে পানামার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ। ম্যাচটি নিশ্চয় জিতেই চাইবে আর্জেন্টিনা। তবে সব ছাপিয়ে স্তাদিও মনুমেন্তালে বিশ্বকাপ উৎসবের ‘সেকেন্ড পার্ট’-ই মঞ্চায়িত হতে যাচ্ছে। সে কারণেই কিনা বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে খেলা একাদশ নিয়েই আর্জেন্টিনার মাঠে নামার সম্ভাবনা প্রবল। তাছাড়া বিশ্বকাপে খেলা সবাই তো আছেন এবারের স্কোয়াডে।

তাঁদের নিয়েই নতুন করে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ উৎসব। সেই পার্টির মাঝে একটুখানি ফুটবল ম্যাচের স্বাদ নেওয়া আর কী!

ইত্তেফাক/এমএএম