শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

আজ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস

দেশে প্রতিদিন যক্ষ্মায় মারা যায় ১০০ জনের বেশি

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৭:৩০

দেশে প্রতিদিন যক্ষ্মায় মৃত্যু হয় ১০০ জনের বেশি মানুষের। তবে সঠিক সময়ে যক্ষ্মা নির্ণয় ও সঠিকভাবে ওষুধ গ্রহণ করলে ৯৬ শতাংশ ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়া সম্ভব বলে জানান সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেছেন, দেশে গত এক দশকে টিউবার কোলোসিস (টিবি) তথা যক্ষ্মা রোগে মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ সময় প্রায় ১০ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। ২০১০ সালে দেশে যক্ষ্মায় আনুমানিক মৃত্যু ছিল প্রতি লাখে ৫৪ জনের, যা ২০২০ সালে এসে কমে দাঁড়ায় প্রতি লাখে ২৭ জনে। চিকিৎসা কলেবর বাড়ায় সুস্থতার হার গত ১০ বছর ধরে ৯৫ শতাংশের বেশি আছে বলে জানিয়েছে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সংশ্লিষ্ট। তারা বলছেন, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারলে যক্ষ্মা নির্মূল সম্ভব হবে।

এমন প্রেক্ষাপটে রোগটি সম্পর্কে আরও বেশি জনসচেতনতা বাড়াতে সারা বিশ্বের মতো আজ ২৪ মার্চ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস-২০২৩। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘হ্যাঁ, আমরা যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারি’। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, যক্ষ্মা বাংলাদেশের জন্য একটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের যে ৩০টি দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সরকারের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির দেওয়া তথ্য বলছে, ২০২১ সালে যক্ষ্মার উপসর্গ আছে এমন প্রায় ২৮ লাখের বেশি মানুষের পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময় ৩ লাখ ৭ হাজার ৪৪৪ জন নতুন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ হিসেবে দৈনিক ৮৪২ জনের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে ২১ হাজার ৪৮১ জন, চট্টগ্রামে ৬০ হাজার ২২ জন, ঢাকায় ৮০ হাজার ১৩৭ জন, খুলনায় ৩৯ হাজার ৭৯৬ জন, ময়মনসিংহে ১৯ হাজার ৪৭ জন, রাজশাহীতে ২৯ হাজার ৩৩৫ জন, রংপুরে ৩১ হাজার ৭০৮ জন ও সিলেটে ২৫ হাজার ৯১৮ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে যক্ষ্মা থেকে সুস্থতার হার ৯৫ দশমিক ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বব্যাপী যক্ষ্মা নির্মূলে গবেষণার পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান ডেমিয়েন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ডা. মাহফুজা রিফাত ইত্তেফাককে বলেন, বাংলাদেশে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীনে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখের মতো রোগী চিহ্নিত হয়। এই বিশাল সংখ্যক রোগীর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক রোগী হয়তো চিকিৎসাসেবার বাইরে থেকে যায়। বর্তমানে যক্ষ্মারোগের চিকিৎসার জন্য অনেক ভালো মানের ওষুধ রয়েছে যা সরকারি ও সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে রোগীদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। যক্ষ্মার উন্নত চিকিৎসা এখন দেশেই পাওয়া যাচ্ছে। যক্ষ্মা প্রতিরোধে বিসিজি টিকা দেওয়া হয়। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন রোগটিতে ১০৭ জনের মৃত্যু হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি পরিসংখ্যান বলছে এই সংখ্যা দিনে ১৮৫।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর টিবি-এল এবং এএসপি লাইন ডাইরেক্টর ডা. মো. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এবং সহযোগী সংস্থাগুলো গত কয়েক দশকে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং ২০১২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রায় ২৩ লাখ মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করেছে। ইউএসএআইডি বাংলাদেশের ইনফেকশাস ডিজিজ টিম লিড ডা. সামিনা চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী সফল কার্যক্রমের কারণে যক্ষ্মার প্রকোপ কমেছে, কিন্তু এখন সময় এসেছে একে নির্মূল করার। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমবিডিসি) অধ্যাপক ডা. কাজী শফিকুল হালিম বলেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা সংক্রমণ ৯৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জন করতে হলে শনাক্তকরণ, নোটিফিকেশনের হার বাড়ানো, সবার জন্য সেবা নিশ্চিতকরণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্টদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

ইত্তেফাক/এমএএম