পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মারবার্গ ভাইরাসে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাসটি ইবোলার সঙ্গে সম্পর্কিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসে শতাধিক মানুষ মারা গেছে। মারবার্গ ভাইরাস আসলে কী ও কতটা ভয়ঙ্কর? বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়।
উৎপত্তি ও নামকরণ
এর আগেও মারবার্গ ভাইরাস ছড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, মারবার্গের প্রাদুর্ভাব ঘটে ১৯৬৭ সালে। জার্মানির মারবার্গ ও ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে এর প্রাদুর্ভাব দেখা যায় তখন। এছাড়া সার্বিয়ার বেলগ্রেডেও ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। পরে এর নামকরণ করা হয় মারবার্গের নামে।]
যেভাবে ছড়ায়
আফ্রিকান সবুজ বানর ও শূকর এর জীবাণু বহন করে। মিশরের রাসেট ফলের বাদুড়ও এই ভাইরাস বহন করে। মারবার্গ ভাইরাস প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয় এবং শারীরিক তরলের মাধ্যমে এক শরীর থেকে অন্য শরীরে স্থানান্তর হয়। এমনকি একজন সংক্রামিত ব্যক্তি সেরে উঠার পরেও, ভাইরাসটি কয়েক মাস ধরে তাদের রক্তে বা বীর্যে থাকতে পারে।
আক্রান্তের লক্ষণ
মারবার্গ ভাইরাসের লক্ষণগুলোর মধ্যে সাধারণত জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা ও পেশী ব্যথা অন্তর্ভুক্ত থাকে। তিন দিন পর এই উপসর্গগুলোর সঙ্গে ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব ও বমি হয়। অনেক সময় এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণও হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেও অনেকে মারা যায়।
এগুলো ছাড়াও মারবার্গ ভাইরাসের অন্যান্য লক্ষণগুলো হল ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ফুসকুড়ি ও হাতে ফুসকুড়ি। ডব্লিউএইচও এর মতে, ভাইরাসে আক্রান্তরা 'ভুতুড়ে' টানা চেহারা, গভীর স্থির চোখ, ভাবহীন মুখ ও চরম অলসতায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
কোন কোন দেশে মারবার্গ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে
নিরক্ষীয় গিনি, ঘানা, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, উগান্ডা ও জিম্বাবুয়ে- এই দেশগুলো এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কথা জানিয়েছে। ২০০৫ সালে অ্যাঙ্গোলায়ও ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়েছিল। সে সময় দেশে তিন শতাধিক মানুষ মারা যায়।
যাইহোক, বিশ্বের বাকি অংশে গত ৪০ বছরে মারবার্গ ভাইরাসে মাত্র দুইজন মারা গেছেন। এর মধ্যে একজন ইউরোপে এবং একজন যুক্তরাষ্ট্রে। দুজনেই উগান্ডায় গুহা অভিযানে গিয়েছিলেন।
কী বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, মারবার্গ আসলে ইবোলা ভাইরাস গ্রুপের অন্তর্গত। গবেষণায় দেখা গেছে, মারবার্গ ইবোলার চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই এই ভাইরাসের ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, মারবার্গ ভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন এখনো আবিষ্কৃত হয়নি।
তাই কোনো ঝুঁকি না নেওয়াই ভালো। মারবার্গ ভাইরাস সবসময় বোঝা যায় না। তাই আগে থেকেই সুরক্ষা নেওয়া দরকার। সেক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হলো, জনসমাগম এড়িয়ে চলা উচিত। বাইরে থেকে এসে হাত-পা ভাল করে ধুয়ে নিন এবং অবশ্যই মাস্ক পরুন।
প্রতিকার
মারবার্গ ভাইরাসের কোনো চিকিৎসা নেই এবং এখনো কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, রক্তের বিভিন্ন পণ্য, ওষুধ ও ইমিউনোথেরাপি তৈরি করা হচ্ছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রচুর পানি পান করা এবং উপসর্গের চিকিৎসা করা রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও, চিকিৎসার জন্য রক্ত সঞ্চালন ব্যবহার করা যেতে পারে।
মারবার্গ ভাইরাসকে কীভাবে থামানো যায়?
আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা 'গাভি' এর মতে, আফ্রিকার বাসিন্দাদের বন্য প্রাণীর মাংস এড়িয়ে চলা উচিত। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, প্রাদুর্ভাব এলাকায় শূকরের সঙ্গে সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।
ভাইরাসে আক্রান্ত পুরুষদের উপসর্গ শুরু হওয়ার এক বছর পর বা তাদের বীর্য দুইবার নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত কনডম ব্যবহার করা উচিত। যারা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কবর দেয় তাদেরও সংস্পর্শ এড়ানো উচিত।