শনিবার, ০৩ জুন ২০২৩, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত নবিদের (আ.) দোয়া

দোয়া কবুলের মাস মাহে রমজান

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৩, ১২:০৪

দোয়ার শক্তি অব্যর্থ। মহান আল্লাহর কাছ থেকে চাওয়া-পাওয়ার বিশেষ উপায় দোয়া। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এবং বুজুর্গানের বহুল চর্চিত-পরীক্ষিত আমলে ‘দোয়ার শক্তি’র প্রকৃত ধারণা মেলে। দোয়া অর্থ ডাকা বা চাওয়া। মহান আল্লাহর নির্দেশ, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব’ (মু’মিন:৬০)। তারই কথা, ‘যখন কোনো প্রার্থনাকারী আমাকে ডাকে, তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিই’ (বাকারা :১৮৬)। প্রিয়নবি (স.) বলেন, ‘তিন শ্রেণির মানুষের দোয়া কবুল হওয়া অবশ্যম্ভাবী : ক. পিতামাতার দোয়া, খ. মুসাফিরের দোয়া এবং গ. মজলুমের দোয়া’ (আবু দাউদ-১৫৩৬)। অপর বর্ণনায় আছে ‘রোজাদারের দোয়া’।

‘রহমতের সওগাত’ রমজান। মাসটি অন্তত চারটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র :(ক) কুরআন নাজিলের মাস, (খ) এ মাসেই ‘লাইলাতুল কদর’, (গ) শয়তান বন্দি থাকে, (ঘ) রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মহিমায় সমুজ্জ্বল। দোয়া কবুলের মাস রমজান সামনে রেখে তুলে ধরছি নবিদের মুনাজাত।

আদম (আ.) : ‘হে আমার রব! আমি নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন এবং আমার প্রতি দয়া না করেন, তাহলে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’ (আ’রাফ :২৩)। 
নুহ (আ.)
 :‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ইমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন এবং ধ্বংস ছাড়া আপনি জালিমদের আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না’ (নুহ :২৮)। 
ইবরাহিম (আ.)
 :‘হে প্রভু, আমাদের মুনাজাত কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ। প্রভু আমার, আমাদের উভয়কে আপনার অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধর থেকেও একটি অনুগত দল সৃষ্টি করুন, আমাদের হজের রীতিনীতি বলে দিন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি তওবা কবুলকারী, দয়ালু’ (বাকারা :১২৭, ১২৮)। 
হুদ (আ.)
 :‘আমি নির্ভর করি আমার ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর ওপর। এমন কোনো জীবজন্তু নেই, যে তার পূর্ণ আয়ত্তাধীন নয়। আমার প্রতিপালক সরল পথে আছেন’ (হুদ :৫৬)। 
লুত (আ.)
 : হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে এবং আমার পরিবারকে “আমার জাতি” যা করে তা থেকে মুক্তি দিন’ (শুআরা :১৬৯)।সুলাইমান (আ.) : ‘হে আমার রব, আপনি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, তার জন্য আমাকে আপনার শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দিন। আর আমি যাতে এমন সত্কাজ করতে পারি, যা আপনি পছন্দ করেন। আর আপনার অনুগ্রহে আপনি আমাকে আপনার সত্কর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন’ (নামল:১৯)। 
ইউনুস (আ.)
 :‘হে আমার প্রতিপালক, আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আপনি পবিত্র, মহিমাময়; নিশ্চয়ই আমি (নিজের প্রতি) অবিচারকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম’ (আম্বিয়া:৮৭)। 
ইউসুফ (আ.)
 :‘হে পালনকর্তা! আপনি আমাকে রাষ্ট্রক্ষমতাও দান করেছেন এবং আমাকে বিভিন্ন তাত্পর্যসহ ব্যাখ্যা করার বিদ্যা শিখিয়ে দিয়েছেন। হে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের স্রষ্টা, আপনিই আমার কার্যনির্বাহক ইহকাল ও পরকালে। আমাকে ইসলামের ওপর মৃত্যু দান করুন এবং আমাকে স্বজনদের সঙ্গে মিলিত করুন’ (ইউসুফ:১০১)। 
জাকারিয়া (আ.) :‘হে আমার পালনকর্তা। আমাকে একা রাখবেন না আর আপনিই তো সর্বোত্তম ওয়ারিস’ (আম্বিয়া: ৮৯)। ‘হে আমার পালনকর্তা। আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পবিত্র-পুণ্যবান সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি দোয়া শ্রবণকারী’ (আল ইমরান:৩৮)। 
শুআইব (আ.) :
‘আমার প্রতিপালক প্রত্যেক বস্তুকে স্বীয় জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে আছেন। আল্লাহর প্রতিই আমরা ভরসা করেছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ফয়সালা করে দিন। আপনিই শ্রেষ্ঠতম ফয়সালাকারী’ (আরাফ:৮৯)। 
মুসা (আ.)
 :‘হে আমার রব, আমার অন্তর প্রশস্ত করে দিন এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। আর আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে’ (ত্বহা:২৫-২৭)। এসব মুনাজাত আমাদের মুখস্থ করে বেশি বেশি ব্যবহার করা প্রয়োজন।

লেখক : ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর

ইত্তেফাক/এসজেড