বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

কষ্টকল্পিত নয় জুননু রাইনের ‘এয়া’

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৩, ১২:২৮

‘এয়া’ জুননু রাইনের কাব্যগ্রন্থ। শূন্য দশকের কবি জুননু রাইনের কবিতা সহজেই পাঠকের অন্তর্মূল স্পর্শ করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে। কবিতার নামে তথাকথিত শব্দের ঝকমারি কিংবা উল্লম্ফন নয়। তাঁর কবিতা সহজেই শিল্পবাড়ির সংবাদ দেয়। যে বাড়িতে যথার্থ জীবনবোধের উজ্জ্বল পতাকা মাথা উঁচিয়ে প্রকৃত কবিতার মহিমা ঘোষণা করে।

‘এয়া’ কাব্যের ছোট ছোট কবিতা বড় বড় কথা বলার যৌক্তিক সাহস রাখে এবং তা শিল্প ও বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়ায়। জুননু রাইনের জীবনদৃষ্টি গভীর। তীক্ষ তো বটেই। ফলে তাঁর ধীমান দৃষ্টির ফলায় চারপাশের দৃশ্যাতীত অনুষঙ্গ অর্থবহ পথ ধরে কবিতার কোঠাঘরে আশ্রয় নেয় এবং ঔজ্জ্বল্য ছড়ায়। সেই উজ্জ্বল আলো ক্যালাইডাইস্কুপের বহু বর্ণিল আলোর মতো পাঠককে বিমোহিত করে, কবিতার প্রতি আগ্রহী করে তোলে। ভেলকির ঘোরে তো ফেলেই—‘একা থাকার জন্য সে ছেড়েছিল রক্তমাংসের জীবনের স্বাদ/কত রাত্রি তার ওপর বয়ে যায়—ভয়াল অন্ধকার/তারপরেও সে ফসলের স্বপ্নে ভরিয়ে দেয় কৃষকের অন্তর।/একা থাকতে থাকতে দেখে ফেলল কোনো এক রাতে/দাঁড়িয়ে আছে সে একারই সাথে’ (কাকতাড়ুয়া)। দেশ বরেণ্য মননশীল লেখক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এই কবির কবিতা সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তা অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ—‘কবিতার প্রাণ থাকে চিত্রকল্পে ও ধ্বনিতে। জুননু ছোট ছোট সব ছবি এঁকেছে, যেগুলো স্বাভাবিকভাবে এসেছে। কষ্টকল্পিত নয়, যান্ত্রিকও নয়, ছোট নদীর ঢেউয়ের মতো তারা আসে এবং স্পর্শ করে। তাদের ধ্বনিগুলো স্বাভাবিক এবং সংযত।’

দ্বিধাহীন বলা যায় জুননু কবিতায় ছবি আঁকেন জীবনের। যে জীবন কৃত্রিমরূপের মুগ্ধতায় নয়, আগ্রহান্বিত হয়, উল্লসিত হয় স্নিগ্ধ সভ্যতা আর মায়াঝরা স্থানিক প্রেমে। ফলে তাঁর কবিতা দিকচিহ্নরহিত নয় কিংবা নয় ঠিকানাবিমুখ। সংশয়হীন উচ্চারণ তাঁর—‘ভালোবাসা তোমার দিকে যেতে চাইলে/তুমি অনাকাঙ্ক্ষিত হাঁসের ধানখেতে/অনুপ্রবেশ মনে আঁকো ঠিকই;/তাড়াতেও পারো না, তুমি উর্বর ভূমি—/তুমিও তো সবুজ ভালোবাসো’... (এয়া-৮)

জীবনানন্দ দাশ কবিতায় নারীর সৌন্দর্যের ভেতর কখনো কখনো স্বদেশের নান্দনিকতা উচ্চকিত করেছেন। আবার যন্ত্রণাদগ্ধ হাহাকারের হলাহলে নীলকণ্ঠও হয়েছেন। জুননু রাইনের কবিতায় হূদয় চর্চার গোপন সংবাদ এসেছে, তবে তা রমণীয়তায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। তাঁর কবিতায় নারী ও স্বদেশের মেলবন্ধনের চমত্কারিত্ব স্বতঃস্ফূর্ততায় উদ্ভাসিত।

জুননু রাইনের নিজস্ব ভাষাশৈলী ও জীবনবোধ যেমন মৌলিক কাব্যপ্রতিভার পরিচয় দেয়, তেমনি দেয় স্বতন্ত্র শিল্পসত্তার সাক্ষ্য। তাঁর কবিতার গঠন কাঠামো, ব্যবহূত মেদহীন শব্দের প্রয়োগ ভিন্ন মাত্রার শিল্প সুষমার রসায়ন। ‘এয়া’ কাব্য অনায়াসে ঘোষণা করে কবিতা প্রকৃতই ‘চুল খোলা আয়েশা আক্তার।’ দিন আসবে, জুননু রাইনের কবিতা উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হবে—এমনটিই আমাদের বিশ্বাস।

এয়া
জুননু রাইন
প্রকাশক: ঐতিহ্য
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০১৮
মূল্য: ১২০ টাকা

ইত্তেফাক/এসজেড

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন