পল রুসেসবাগিনা, একজন ব্যবসায়ী যার ভূমিকা রুয়ান্ডার গণহত্যায় হাজারেরও বেশি জীবন বাঁচিয়েছিল, কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার জন্য তাকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি এই সাজা পেয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় সাজা কমানো হয় এবং মাত্র দেড় বছর পর তিনি মুক্তি পান। শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাতে মুক্তি পাওয়ার পর রুসেসবাগিনাকে রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে কাতারের রাষ্ট্রদূতের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
বাইডেন প্রশাসনের দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ওয়াশিংটনে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, ওই সময় মার্কিন দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা তার সঙ্গে ছিলেন। রুসেসবাগিনা দুই দিনের মধ্যে কাতারের রাজধানী দোহার উদ্দেশে রুয়ান্ডা ত্যাগ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি দোহা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন, যেখানে তার স্থায়ী নাগরিকত্ব রয়েছে। রুয়ান্ডার সরকার শুক্রবার সকালে রুসেসবাগিনাকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে। ঐতিহাসিকভাবে, রুয়ান্ডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক উষ্ণ ছিল।
কিন্তু রুসেসবাগিনার কারাবাস ও প্রতিবেশী ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোতে (ডিআরসি) রুয়ান্ডার হস্তক্ষেপের কারণে তাদের জোট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামের মুখপাত্র স্টেফানি নিওম্বারে এক টুইটে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র-রুয়ান্ডা সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার ফল এটি।'
২০২০ সালে রুসেসবাগিনাকে প্রতারণা করে দুবাই থেকে একটি ব্যক্তিগত বিমানে করে রুয়ান্ডায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং গ্রেফতার করা হয়। কাগামের শাসনের বিরোধী একটি সংগঠনে জড়িত থাকার জন্য তাকে কারাগারে দণ্ডিত করা হয়।
তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বিচারে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। রুসেসবাগিনার সমর্থকরা তার বিচার ও শাস্তিকে 'রাজনৈতিক অভ্যুত্থান' বলে অভিহিত করে আসছে। তার কারাদণ্ডকে ‘ভুলভাবে আটক’ বলে অভিহিত করে আসছিল ওয়াশিংটন।
এর জন্য ন্যায্য বিচারের নিশ্চয়তা না থাকাকেও দায়ী করেছিল তারা। ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় গণহত্যার সময় রাজধানী কিগালিতে একটি হোটেলের ম্যানেজার ছিলেন রুসেসবাগিনা। গণহত্যায় আট লাখেরও বেশি তুতসি ও হুতুস নিহত হয়েছিল।
রুসেসবাগিনা সেই সময় হোটেলে আশ্রয় দিয়ে ১ হাজার ২০০ জনের জীবন বাঁচিয়েছিলেন। রুসেসবাগিনার জীবন কাহিনী নিয়ে পরে হলিউডে 'হোটেল রুয়ান্ডা' নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। যদিও ছবিটির কিছু অংশ বিতর্কিত ছিল।
তবুও এটি অস্কারের জন্য মনোনীত হয় এবং পল রুসেসবাগিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উপাধিতে ভূষিত হন। রুসেসবাগিনা পরে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট কাগামের তীব্র সমালোচক হয়ে ওঠেন।
কাগামকে স্বৈরশাসক বলে নিন্দা করা এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে রুসেসাবাগিনার সমালোচনা বাড়তে থাকলে তিনি রাষ্ট্রের চোখে শত্রু হয়ে যান। দুবাইতে নির্বাসনে থাকাকালীন বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দেন রুসেসবাগিনা। ওই জোটের একটি সশস্ত্র শাখা ছিল।
আর তা হলো ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (এফএলএন)। ২০১৮ সালে একটি ভিডিও বার্তায় শাসন পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, 'রুয়ান্ডায় পরিবর্তন আনতে আমাদের যা কিছু আছে তা নিয়ে মাঠে নামার সময় এসেছে।'
এই এফএলএন ২০১৮ সালে হামলা চালানোর জন্য অভিযুক্ত। কর্তৃপক্ষের মতে, তাদের হামলায় নয়জন নিহত হয়েছেন। তবে রুসেসবাগিনা জানিয়েছেন, তিনি কখনই কাউকে বেসামরিক মানুষকে টার্গেট করার নির্দেশ দেননি। তবে এফএলএনকে টাকা পাঠানোর কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
রুসেসবাগিনার মুক্তি রুয়ান্ডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস করবে বলে আশা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বারবার রুয়ান্ডাকে এম-২৩ সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন বন্ধ করতে এবং প্রতিবেশী ডিআরসি থেকে তার সেনা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে। তবে, রুয়ান্ডা ডিআরসিতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।