যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যার দায় থেকে ফাঁসির আসামি আব্দুল্লাহ ওরফে তিতুমীর ওরফে তিতুকে খালাস দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে খালাসের ওই রায় স্থগিত করেছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। একইসঙ্গে আসামি তিতুমীরকে কনডেম সেল থেকে সাধারণ সেলে স্থানান্তর করতে কারা কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এই আদেশ দেন।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ডেথ রেফারেন্স খারিজ করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তিতুমীরকে খালাস দিয়েছিল হাইকোর্ট। চলতি মার্চ মাসের শুরুতে খালাসের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। রায়ে স্ত্রীকে হত্যায় দণ্ড প্রদানে ঘটনার সময় স্বামীর উপস্থিতি প্রমাণের ওপর জোর দেওয়া হয় রায়ে।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সাক্ষ্য আইনের ১০৬ ধারা অনুযায়ী ঋণাত্মক দায় নীতি (ঘটনার সময় স্বামীর উপস্থিতি) প্রযোজ্য হয় তাহলে মামলার আসামিকেই প্রমাণ করতে হবে যে সেখানে হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। আর যদি হত্যাকাণ্ড ঘটেও থাকে তাহলে সেটা যৌতুকের দাবিতে হয়নি। তবে এই ঋণাত্মক দায় নীতিমালা প্রযোজ্য হওয়ার পূর্বে দুটি প্রাথমিক বিষয় রাষ্ট্রপক্ষকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে উঠে প্রমাণ করতে হবে। এর একটি হলো মামলার ভিকটিম (স্ত্রী) আসামির হেফাজতে ছিল এবং ঘটনার সময় আসামি এবং ভিকটিম একত্রে ছিল।
কিন্তু এই মামলায় স্বামীর হেফাজতে ছিল স্ত্রী এবং তিনিই স্ত্রীকে হত্যা করেছেন-আসামি তিতুমীরের বিরুদ্ধে আনীত এমন অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে তাকে খালাস দেওয়া হলো। বাতিল করা হলো নিম্ন আদালতের ফাঁসির রায়।
এই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে দেন।
এখন এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল দায়ের করবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। তিনি বলেন, রায়টি বিশ্লেষণ করে আমরা আপিল বিভাগের শুনানিতে আমাদের বক্তব্য যথাসময়ে তুলে ধরব।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে যশোরের কোতয়ালি থানার সালমা খাতুনের সঙ্গে বিবাহ হয় আব্দুল্লাহ ওরফে তিতুমীর ওরফে তিতুর। দেড় বছরের সংসার জীবনের সমাপ্তি হয় ২০১২ সালের ৯ জুলাই। ওইদিন রাতে শ্বশুর বাড়ি থেকে অগ্নিদগ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয় সালমার। স্বামী তিতুমীরের বিরুদ্ধে ভিকটিমের বাবার করা মামলায় অভিযোগ করা হয়, যৌতুক হিসাবে মোটরসাইকেল না দেওয়ায় সালমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসরোধ করে কেরোসিন জাতীয় পদার্থ গায়ে ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(ক) ধারায় তিতুমীরকে মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করে ট্রাইব্যুনাল।