সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

এমপি পদ খারিজের পেছনে রয়েছে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্য': রাহুল

আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৩, ২২:০০

একটি মামলায় কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে পার্লামেন্ট সদস্যপদ হারানোর পর ভারতের বিরোধীদল কংগ্রেস পার্টির নেতা রাহুল গান্ধী এর নিন্দা করে বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এটা করা হয়েছে। খবর বিবিসি।

গান্ধী সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে তিনি যে অভিযোগ এনেছেন তা থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর জন্যই তার লোকসভা সদস্যপদ খারিজ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, লোকসভার সদস্যপদ হারানো বা জেল - এসব তাকে মোদি এবং কোটিপতি ব্যবসায়ী গৌতম আদানির সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলা থেকে বিরত রাখতে পারবে না।

ভারতের অন্যান্য বিরোধী দলও এ ঘটনায়  গান্ধীর প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছে। শুক্রবার ১৪টি দল সুপ্রিম কোর্টের কাছে অভিযোগ করেছে যে ফেডারেল সরকার বিজেপি-বিরোধীদের হয়রানি করার জন্য তদন্তকারী সংস্থাগুলোর ক্ষমতাকে অপব্যবহার করছে।

অন্যদিকে সরকারি দল হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি বলছে পার্লামেন্টারি নিয়ম-নীতি অনুযায়ীই রাহুল গান্ধীকে সংসদ সদস্য থাকার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার  গান্ধীকে একটি মানহানির মামলায় দু'বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পরই তার লোকসভা সদস্যপদ খারিজ করা হয়।

ভারতের জন-প্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী কোন এমপির দু'বছর জেলের সাজা হলেই আপনা থেকে তার পার্লামেন্ট সদস্যপদ খারিজ হয়ে যায় ।

গুজরাতের সুরাত শহরের আদালতে যেদিন গান্ধী দোষী সাব্যস্ত হন, অর্থাৎ ২৩ মার্চ, সেদিন থেকেই তার সংসদ সদস্যপদ খারিজ হয় ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)(ই) এবং জন প্রতিনিধিত্ব আইনের আট নম্বর ধারা অনুযায়ী। লোকসভার এক গেজেট নোটিফিকেশনে একথা উল্লেখ করা হয়।

তবে ওই সাজার ওপরে ৩০ দিনের জন্য স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত।

কেন মানহানির মামলা হয়েছিল রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে

রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছিল পুর্ণেশ মোদি নামে দেশটির ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির এক আইনপ্রণেতার অভিযোগের ভিত্তিতে।

২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার করার সময়ে গান্ধী বলেছিলেন - নিরাভ মোদী, ললিত মোদী, নরেন্দ্র মোদিসহ মোদি পদবীধারীদের সবাই কী করে ‘চোর’ হয়!

নিরাভ মোদি হচ্ছেন ভারতের পলাতক হীরা ব্যবসায়ী। আর ললিত মোদি হচ্ছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের সাবেক প্রধান যার উপর আজীবনের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড।

মানহানির মামলায় অভিযোগকারী বলেছিলেন, গান্ধীর ওই মন্তব্য সমগ্র মোদি সম্প্রদায়ের জন্য মানহানিকর।

ভারতে রাহুল গান্ধীই অবশ্য প্রথম সংসদ সদস্য নন - যার পদ খারিজ হলো।

এবছরই ১১ জানুয়ারি লাক্ষাদ্বীপের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ফয়সলের পদ খারিজ হয় আদালতে হত্যার চেষ্টার মামলায় দশ বছরের জেল হওয়ার পরে।

এমবিবিএস কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার পরে রাজ্যসভার সংসদ সদস্য রশিদ মাসুদের পদও খারিজ হয়ে গিয়েছিল ২০১৩ সালে।

ওই বছরেই বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদবকে পশু খাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সেই সময়ে বিহারের সারণ আসনের সংসদ সদস্য যাদবকে পদ খোয়াতে হয়।

একই পশু খাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন জনতা দল ইউনাইটেডের সংসদ সদস্য জগদীশ শর্মা। তাকেও খোয়াতে হয় এমপি পদ।

দোষী সাব্যস্ত হয়ে পদ খুইয়েছেন কয়েকজন রাজ্য বিধানসভার সদস্যও।

সমাজবাদী পার্টির নেতা আজম খান ‘ঘৃণা ভাষণ’ দেওয়ার একটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা সদস্য পদ খারিজ হয়ে যায়।

ওই রাজ্যেরই আরেক বিধানসভা সদস্য বিজেপির নেতা ভিক্রম সাইনির সদস্যপদ খারিজ হয়ে যায় যখন আদালত তাকে দাঙ্গায় জড়িত থাকার অপরাধে দু বছরের সাজা দেয়।

ইত্তেফাক/এফএস