শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

কর্মকর্তার নামে প্রকাশ্যে ঘুষ আদায় করছেন ঝাড়ুদার

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৩, ১৯:৪৯

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে অস্থায়ীভাবে কর্মরত নৈশপ্রহরী কাম ঝাড়ুদার সোহেল। ঝাড়ুদার হলেও সবাই তাকে সাবরেজিস্ট্রার আবুল কালাম আজাদের কাছের লোক হিসেবে চেনে। সেই সুবাধে অফিস সহায়কের চেয়ারে বসে প্রতিদিন সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে প্রকাশ্যে মোটা অংকের অর্থ আদায় করছেন। টাকা ছাড়া কোনো ফাইল নড়েনা। টাকা দিলে সব কাজ হয়। 

এছাড়াও সেবাগ্রহীতাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে কমিশনের মাধ্যমে দলিল করাতে কর্মকর্তাদের সঙ্গে যেতে দেখা যায় সোহেলকে। যদিও তার সেখানে যাওয়ার কথা নই। বড়কর্তার হাত রয়েছে বলে সোহেল যেকোনো কাজ করতে দ্বিধাবোধ করছেন না বলে অভিযোগ দলিল লেখক ও সেবাগ্রহীতাদের। 

সেবা নিতে আসা অনেকেই বলেন, সাবরেজিস্ট্রারের কাছে গেলে তিনি সোহেলের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। আর সোহেল এ সুযোগটাই কাজে লাগায়। সাবরেজিস্ট্রার কত টাকা হলে দলিল রেজিস্ট্রি করবে তা নির্ধারণ করে সোহেল। তার বেঁধে দেওয়া টাকার পরিমাণ কম বেশি হলেই জমি রেজিস্ট্রি করে না সাবরেজিস্ট্রার আবুল কালাম আজাদ। আর সেই ক্ষমতার দাপটে ঘুষের টাকায় রীতিমতো কোটিপতি বনে গেছে ঝাড়ুদার সোহেল।

সরেজমিনে সাবরেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সাবরেজিস্ট্রার অফিসে নেই। তিনি সপ্তাহে দুই দিন অফিস করেন। ঝাড়ুদার সোহেল বসে করছেন সেই কাজ। তার সামনে দলিলের স্তূপ। অথচ সোহেলের আসল পদ ঝাড়ুদার। চেয়ারে বসে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে প্রকাশ্যেই ঘুষের টাকা নিতে দেখা যায়।

এ সময় লোকমান ও আব্দুর রহিম নামে দুই সেবাগ্রহীতা জমি বিক্রি করার জন্য দলিল করতে এসেছেন। সোহেল তাদের কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করে। পরে গোপনে সেটা রফাদফা হয়। সোহেল প্রতি দলিলে এভাবেই সাবরেজিস্ট্রারের কথা বলে টাকা নিচ্ছে। 

হারুনুর রশিদ নামে এক ভুক্তভোগী সেবাগ্রহীতা বলেন, কিছু করার নেই। দলিল করাতে ২০ হাজার টাকা দাবি করেছে। টাকা না দেওয়ায় সোহেল অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। পরে ৬ হাজার টাকা দিয়ে দলিল করাতে হয়েছে।

সেবা নিতে আসা আরেক ভুক্তভোগী আনোয়ার হোসেন বলেন, সোহেল ঝাড়ুদার হলেও সাবরেজিস্ট্রারের ডানহাত। সাবরেজিস্ট্রার সরাসরি টাকা না নিলেও সোহেলর মাধ্যমে ঘুষের টাকা আদায় করেন। চাহিদামত টাকা না দিলে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। অথচ সে একজন ঝাড়ুদার। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি।

ঝাড়ুদার সোহেল বলেন, চুক্তিভিত্তিক নৈশপ্রহরী কাম ঝাড়ুদার হিসেবে ৮ বছর ধরে কর্মরত। কোনো টাকা পয়সা নিই না। এছাড়া অফিসের কিছু দলিল লেখকের অনুরোধে কাজ করে দেয়। সাবরেজিস্ট্রার অফিসে না আসলে মাঝে মধ্যে অফিসে বসি।  

এ বিষয়ে সাবরেজিস্ট্রার আবুল কালাম আজাদকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

জেলা রেজিস্ট্রার মো. লোকমান হোসেন বলেন, সোহেল নৈশপ্রহরী বা ঝাড়ুদার কিনা সেটা জানা নেই। টাকার নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এরপরও বিষয়টি যেহেতু জেনেছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/এবি/পিও