রোববার, ২৮ মে ২০২৩, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

খর্ব হচ্ছে পারিবারিক কর্তৃত্ব

ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এক পরিবারের তিন জনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবে না

আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৩, ০১:০১

ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পারিবারিক কতৃত্ব খর্ব হচ্ছে। এক পরিবার থেকে তিন জনের বেশি ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না—এমন বিধান রেখে ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২৩’ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে নতুন এই আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সংস্কার ও সমন্বয়) মো. মাহমুদুল হাসান।

সচিব বলেন, কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একটি পরিবারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ তিন জন পরিচালক হতে পারবেন। বিদ্যমান আইনে সর্বোচ্চ চার জন পরিচালক নিযুক্ত হতে পারছেন। আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী কার্যকর হলে পরিচালনা পর্ষদে পরিবারের কর্তৃত্ব হ্রাস পাবে বলে জানান সচিব। উল্লেখ্য, এ আইন সংশোধনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক উভয়েরই শর্ত রয়েছে যে, জাতীয় সংসদে আগামী জুনের মধ্যে তা উপস্থাপন করতে হবে। সচিব আরো বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ খেলাপি হলে তিনি ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না। এমনকি ঋণের অর্থ পরিশোধ করলেও তিনি পরবর্তী পাঁচ বছর আর পরিচালক হতে পারবেন না।

খসড়া আইন অনুযায়ী, ঋণখেলাপিদের দেশের বাইরে যেতে হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে। ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপি হলে ৫০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা জরিমানা। জরিমানার অর্থ এককালীন দিতে ব্যর্থ হলে প্রতিদিন ১ লাখ করে জরিমানা দিতে হবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ভিত্তিতে বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এটাকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার জন্য সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়। প্রস্তাবিত আইনে মোট ৩৪টি ধারা রয়েছে।

সংশোধনীতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি কারা—এ বিষয়ে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সচিব আরো বলেন, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সংশোধনীতে উল্লেখ রয়েছে। সামর্থ্য থাকার পরও যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণ, অগ্রিম বা বিনিয়োগ বা আর্থিক সুবিধার অংশ বা তার ওপর আরোপিত সুদ পরিশোধ না করে, তাহলে তা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবে।

সচিব বলেন, এছাড়া কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতি বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজের বা পরিবারের সদস্যদের নামে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করলে, সেটাকেও ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির আওতায় আনা হয়েছে। একই সঙ্গে যে উদ্দেশ্যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ অগ্রিম নেওয়া হয়েছে, সেই উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করলেও ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবে।

এদিকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সরবরাহ করবে বলে জানান মাহমুদুল হোসাইন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। এছাড়া ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) কাছে কোম্পানি নিবন্ধনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। তিনি আরো বলেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপি হিসেবে পরিগণিত হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার পরিচালক পদ শূন্য ঘোষণা করতে পারবে।

মাহমুদুল হাসান বলেন, ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে লেনদেন, ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ঋণ প্রদান ও জামানত গ্রহণের বিষয়টি নতুন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বা তার আত্মীয় যে-ই হোক না কেন, তাকে অবশ্যই জামানত বা বন্ড বা সিকিউরিটি দিয়ে ঋণ নিতে হবে।

তিনি জানান, ব্যাংক কোনো পরিচালক বা পরিচালকের পরিবারের সদস্যকে জামানতি ঋণ বা অগ্রিম ছাড়া অন্য কোনো ঋণ বা অগ্রিম মঞ্জুর করবে না। পরিচালক বা পরিচালকের সদস্যদের দায় গ্রহণের ভিত্তিতে জামানতি ঋণ, অগ্রিম ঋণ বা অন্য কোন আর্থিক সুবিধা প্রদান করবে না। এখন এটা নির্দিষ্ট করা হয়েছে, সে যে-ই হোক না কেন, প্রত্যেকের ক্ষেত্রে কো-লেটারেল থাকতে হবে। যেমন—জামানত, বন্ধক থাকতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সবার ক্ষেত্রে। এছাড়া ব্যাংক কোম্পানির অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিষ্ঠাতা বা ফাউন্ডেশন যেন বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত ইন্সপেকশন করতে পারে, সেই ধারা এখানে সংযোজন করা হয়েছে বলেও জানান সচিব।

ইত্তেফাক/ইআ