পেশায় নির্মাতা, অথচ নতুন ভবন তৈরি করায় অনীহা। দুই চেক নির্মাতা পরিবেশ সংরক্ষণ, আর্থিক সাশ্রয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে নতুনের বদলে পুরোনো ভবনের সংস্কারের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। নির্মাতা হিসেবে ওন্দ্রেই চিবিক ও মিশাল ক্রিশটফ পুরানো ভবন বাঁচানোর শপথ নিয়েছেন।
২০১২ সালে তারা চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগ থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ব্র্যুন শহরে এক দফতর প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯২ সালে তৈরি একটি ভবনও সেখানে রয়েছে। আগে সেখানে গাড়ির দোকান ছিল। আজ এক চেক আসবাবের কোম্পানি ভবনটিকে শোরুম হিসেবে ব্যবহার করছে।
গোটা ভবনটিকে কোম্পানির তৈরি ৯০০ প্লাস্টিক চেয়ার দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে। সেই সমাধান সূত্র শুধু অর্থ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয় করছে না, কোম্পানির নিজস্ব পরিচয় আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরছে। ভবনের ভেতরের অংশ সংস্কার করে আধুনিক রূপ দেওয়া হয়েছে।
তিনটি বিভাবনযোগ্য অংশে কোম্পানির পণ্যের সম্ভার শোভা পাচ্ছে। একেবারে নতুন নির্মাণের তুলনায় ভবন সংস্কারের ব্যয়ের মাত্রা ছিল অনেক কম। তবে ওন্দ্রেই চিবিকের কাছে সেটাই একমাত্র জরুরি বিষয় নয়।
তিনি বলেন, 'আমার মতে, এমন তাজা এক ভবন ভেঙে ফেলার কোনো অর্থ হয় না। সেটা মোটেই টেকসই প্রক্রিয়া নয়। স্থাপত্যের প্রতি আমাদের মনোভাবের মাধ্যমে আমরা ভবনটি বাঁচিয়েছি। যেমনটা দেখছেন, সব উপকরণ রক্ষা করেছি। ভবনটি এখন সবার পরিচিত, একটা প্রতীক হয়ে উঠেছে। কেউ আর এই ভবনটি ধ্বংস করবে না।'
৫০ জনেরও বেশি টিমসহ এই দুই নির্মাতা মূলত ইউরোপেই বিভিন্ন প্রকল্পের রূপায়ন করেন। সেগুলোর মধ্যে নতুন নির্মাণের প্রকল্পও রয়েছে। যেমন চেক প্রজাতন্ত্রের দক্ষিণে জনাইম শহরের কাছে ভিনিয়ার্ডের একটি ভবন। বর্তমানে তারা চেক প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে উঁচু ভবন 'ওস্ট্রাওয়া টাওয়ার' এ কাজ করছেন।
২৩৫ মিটার উচ্চতার ভবনটির কাজ ২০২৭ সালে শেষ হবার কথা। তবে পুরানো ভবনের সংস্কারই দুই নির্মাতার হৃদয় সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করে। ওন্দ্রেই চিবিক বলেন, 'আমার মতে, সভ্যতা হিসেবে আমরা ইতোমধ্যেই যথেষ্ট নির্মাণের কাজ করেছি। অস্তিত্ব রয়েছে, এমন কিছু নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে চাই। অতীতের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত প্রেক্ষাপট বোঝার চেষ্টা করে সেটির রূপান্তর বা তাতে সমসাময়িক কিছু যোগ করতে চাই।'
দুই নির্মাতার কাছে কোনো ভবনের ইতিহাস এবং ভবনটির উৎপত্তির সময়ের প্রতিফলনেরও মূল্য রয়েছে। এমনকি ব্রুটালিস্ট শৈলিতে তৈরি ব্র্যুন শহরের বাস স্টেশনেরও গুরুত্ব দেখেন তারা। অনেকে সেটিকে দেশের সমাজতান্ত্রিক অতীতের কালো ছায়া মনে করেন।
ওন্দ্রেই মনে করেন, 'এমন ভবনেরও একটা সৌন্দর্য রয়েছে, সেগুলো আমাদের ইতিহাসের অংশ। সেগুলো ভেঙে ফেলার অর্থ আমরা যেন আমাদের ইতিহাসের এই অংশ এড়িয়ে যাচ্ছি। আমার মতে, সেটা ভুল হবে।' রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ১৯৮৮ সালে তৈরি রেল স্টেশনের বেহাল অবস্থা হয়েছিল।
ছাত্র বয়সে দুই নির্মাতাই সেই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেছেন। ২০১১ সালে তারা স্টেশন ভবনের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওন্দ্রেই চিবিক বলেন, 'একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের শহরের এমন গুরুত্বপূর্ণ এক জায়গা এত খারাপ অবস্থায় রয়েছে জেনে আমার খুব লজ্জা হয়েছিল। অবস্থার উন্নতি করতে সাহায্য করতে পেরে আমরা খুশি।'
স্টেশনের সংস্কারের জন্য তাদের হাতে সব মিলিয়ে ৫০ লাখ ইউরো ছিল। সেই কাজের আওতায় তারা ছাদের কাঠামোয় সাদা রং করেছেন, নতুন আলোকসজ্জা বসিয়েছেন, এনট্রেন্স হল বানিয়েছেন এবং প্ল্যাটফর্মের নতুন বিন্যাস করেছেন। ওন্দ্রেই চিবিকের কাছে সেই কাজ মোটেই স্থাপত্যের মাইলফলক ছিল না।
শহরের মানুষের জন্য উন্নতি আনাই ছিল সেই প্রয়াসের লক্ষ্য। তিনি বলেন, 'পেশাদার ব্যক্তি ও নির্মাতা হিসেবে আমাকে নিজেদের বিশেষ ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস রাখতেই হয়। আমরা ঠিকমতো ও সাফল্যের সঙ্গে কাজ করলে সেই উদ্যোগ হয়তো সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে অবদান রাখতে পারে।'
চিবিক ও ক্রিশটফ দেখিয়ে দিচ্ছেন, যে তার জন্য সব সময়ে নতুন ভবনের প্রয়োজন হয় না।