সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

ইউরোপে মসজিদের ছবির অভিনব সংগ্রহ

আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৩, ১০:৩২

বেলারুশের মতো দেশেও যে মসজিদ রয়েছে, সেটা ক'জন জানে? এক জার্মান-ডেনিশ ফটোগ্রাফার ইউরোপের মসজিদ ও ইসলামি স্থাপত্যের ছবি তুলে সংকলন প্রকাশ করেছেন। ইউরোপীয় মুসলিমদের সম্পর্কে ভুল ধারণা ভাঙতে চান তিনি।

প্রাচ্যদেশীয় অলংকার, ক্যালিগ্রাফি ও জমকালো ঝাড়বাতি হোক, বা কোপেনহেগেনের প্রধান মসজিদের স্থাপত্য ও নান্দনিকতা, এমন সব স্থাপনা জার্মান-ডেনিশ আলোকচিত্রী একহার্ড আহমেদ ক্রাউসেনকে মুগ্ধ করে। শুধু তাই নয়, সামগ্রিকভাবে তার কাছে মসজিদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। 

জার্মান-ডেনিশ আলোকচিত্রী একহার্ড আহমেদ ক্রাউসেন

একহার্ড বলেন, 'মসজিদের মধ্যে শান্ত পরিবেশ আমাকে মুগ্ধ করে। মানুষ সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ক্যালিগ্রাফি পড়তে পারেন, অন্যান্য মুসলিমদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। অবশ্যই নামাজ পড়া তো যায়ই। শান্তিতে পরিবেশও উপভোগ করা যায়।'

ফটোগ্রাফার হিসেবে তিনি অনেক বছর ধরে ইউরোপের মসজিদ ও ইসলামি স্থাপত্য নথিভুক্ত করে চলেছেন। জার্মানি, ইটালি, স্পেন ও ব্রিটেনের মতো ইউরোপের ১৫টি দেশে তিনি ৭০টিরও বেশি মসজিদের ছবি তুলেছেন। সেই ছবির একটি সংকলনও প্রকাশিত হয়েছে। 

মসজিদের মধ্যে শান্ত পরিবেশ তাকে মুগ্ধ করে।

ইসলামি বিশ্বের সঙ্গে একটি পার্থক্য তিনি লক্ষ্য করেছেন। একহার্ডের মতে, মুসলিম দেশগুলোর তুলনায় ইউরোপের মসজিদগুলোর আকার-আয়তন ও চাকচিক্য কম। ইউরোপের মসজিদগুলোতে সাধারণত লাউডস্পিকারের মাধ্যমে আযান দেওয়ার অনুমতি নেই। 

বহুকাল আযানের মিনার নির্মাণেরও অনুমতি ছিল না। তবে ইউরোপে মুসলিমদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় অনেক মসজিদ বাইরে থেকেও সহজে চেনা যায়। একহার্ড আহমেদ ক্রাউসেন বলেন, 'ডেনমার্কে নতুন ও আধুনিক মসজিদে মিনার তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়। আগে সেটা সম্ভব ছিল না। ১৯৬৪ সালে কোপেনহেগেনের বাইরে প্রথম মসজিদ তৈরির সময়ে সেটা স্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছিল। সৌভাগ্যবশত আজ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।'

ইউরোপীয় মুসলিম হিসেবে নিজের পরিচয়ের খোঁজে তিনি ফটোগ্রাফিকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন।

একহার্ড আহমেদ ক্রাউসেন জার্মানির পশ্চিমে আখেন শহরে এক রক্ষণশীল খ্রিস্টান পরিবারে বড় হয়েছেন। গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষে তিনি জার্মানি ছেড়ে এশিয়া ও আফ্রিকার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন। মিশরে গিয়ে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ১৯৯২ সালে তিনি ধর্মান্তরিত হন। 

তখন তার বয়স তিরিশের শেষ দিকে। ইউরোপীয় মুসলিম হিসেবে নিজের পরিচয়ের খোঁজে তিনি ফটোগ্রাফিকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন। একহার্ড বলেন, 'আমি বুঝতে পারলাম, আমি আসলে ইউরোপীয় ইসলামি স্থাপত্যের সন্ধান করছি। সেটা আমার এত ভালো লেগেছিল, যে আমি সরাসরি এই সব মসজিদ ভালোবেসে ফেলেছিলাম। এগুলো আমারই মসজিদ, আমার বিশাল ভালোবাসা।'

ইউরোপীয় মুসলিম হিসেবে নিজের পরিচয়ের খোঁজে তিনি ফটোগ্রাফিকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন।

দুই দশক ধরে একহার্ড যে সব মসজিদের ছবি তুলে চলেছেন, সেগুলো একাধিক প্রদর্শনীতে দেখানো হয়েছে। তার বইয়ে ব্যক্তিগত স্তরে সবচেয়ে প্রিয় মসজিদগুলোর ছবি স্থান পেয়েছে। একহার্ড আহমেদ ক্রাউসেন বলেন, 'বেলারুশের মসজিদ আমার সবচেয়ে প্রিয়। হলুদ আমার সবচেয়ে পছন্দের রং বলে হলুদ রংয়ের এই মসজিদ মনে ধরেছে। ডেনিশ ভাষায় একটি বই আমার অন্য প্রকল্প। সেটির মধ্যে এই বইয়ের তুলনায়ও বেশি অভিব্যক্তি ফুটে উঠবে।'

একহার্ড আহমেদ ক্রাউসেন ডেনমার্কেই বাসা বেঁধেছেন। নিজের তোলা ছবির মধ্যে তিনি নিজের জীবনকাহিনীর প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। ইউরোপে মুসলিমদের সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করার লক্ষ্যে কাজ করতে চান তিনি।

ইত্তেফাক/ডিএস