শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

সহমর্মিতার মাস রমজান

আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৩, ১১:১২

সৃষ্টিজগতের অসংখ্য সৃষ্টির মধ্যে মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হওয়ার কারণে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য ব্যাপক। মানুষ সামাজিক জীব। পৃথিবীতে এমন কোনো সমাজ পাওয়া যাবে না, যে সমাজে অতিপীড়িত, অসহায়, অভাবগ্রস্ত, ক্ষুধার্ত, নিরন্ন ও দুস্থ মানুষ নেই। এসব বিচিত্র মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা, তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা ও সহানুভূতি-সহমর্মিতার হাত প্রসারিত করা আমাদের পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। পবিত্র ইসলামের শিক্ষাও তাই। প্রিয় নবি মোহাম্মদুর রসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘পৃথিবীতে যারা আছে, তাদের প্রতি তোমরা দয়া করো, তাহলে আকাশে অধিষ্ঠিত প্রভুও তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’

যে হৃদয় অন্যের ব্যথা বোঝে না, যে মানুষ অন্যের প্রতি দয়া করে না, সে কখনো অন্যের দয়ার আশা করতে পারে না। রুগ্ণ ব্যক্তির সেবা করা, ক্ষুধার্তকে অন্ন দান করা, বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান, নিরাশ্রয়কে আশ্রয় দেওয়া, বিদ্যাহীনকে বিদ্যাদান, বিপথগামীকে সুপথ দেখানো, মজলুমকে সাহায্য করা ধর্মীয় ও মানবিক দায়িত্ব। রসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করে না, আল্লাহ তাআলাও তার প্রতি অনুগ্রহ করেন না।’ মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের জন্য প্রতিটি মুমিনের উচিত সহমর্মিতা প্রদর্শনের মাধ্যমে সৃষ্টিকুলের সেবায় এগিয়ে আসা।

প্রিয় নবি রসুলুল্লাহ (স.) ঘোষণা করেছেন, ‘তুমি সৃষ্টিকুলের প্রতি অনুগ্রহ করো, যেমনটি আল্লাহ তাআলা তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন।’ অল্লাহ তাআলা তোমাকে অর্থ, বিত্ত-বৈভ ও সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তি দিয়ে যেমন তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, তুমিও জ্ঞাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে মানবকল্যাণ সাধনের মাধ্যমে খোদা প্রদত্ত ইহসানের শোকরিয়া জ্ঞাপন করো। পবিত্র মাহে রমজান সহমর্মিতা প্রদর্শনের এক উপযুক্ত সময়। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন এই মাসে পূর্ণ এক মাস সিয়াম সাধনা ফরজ করেছেন। এর মাধ্যমে ক্ষুধার্ত ও  বিপন্ন মানুষের জঠরজ্বালা অনুধাবনের এক মহাসুযোগ তৈরি হয়েছে। পূর্ণ এক মাস সিয়ামের মধ্য দিয়ে রোজাদার একদিকে অর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি আর রুহানি শক্তি; অন্যদিকে রোজাদারের মধ্যে তৈরি হয় আত্মসংযম, অধ্যবসায় ও অনুশীলেনের এক সুমাহন শিক্ষা। ফলে সে একদিকে বেঁচে থাকে, সব ধরনের পাপাচার-অনাচার, জুলুম-নির্যাতন, শোষণ আর প্রতারণা থেকে; অন্যদিকে তার মধ্যে জাগ্রত হয় ক্ষুধা-পিপাসা, অভাব-অনটন, অনাহার-অর্ধাহার আর দারিদ্র্যের কঠিন কশাঘাত মানুষকে কী পরিমাণ অসহায় করে তুলতে পারে সেই  উপলব্ধি। তাই তো রসুলুল্লাাহ (স.) এই মাসকে ‘সহমর্মিতার মাস’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন মুসলমানদের সহমর্মিতায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য গরিবদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে ধনীদের ওপর ফিতরা ওয়াজিব করেছেন। বিত্তশালীদের ওপর জাকাত ফরজ করেছেন। শুধু তাই নয়, মানুষ যাতে জাকাত-ফিতরা, সাদাকাহ ও দান-খয়রাতের মাধ্যমে অধিক সওয়াব হাসিল করতে পারে, সে জন্য প্রতিটি নেক কাজের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০ গুণ বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন। তাছাড়া মাহে রমজানের মর্যাদার খাতিরে আল্লাহ তাআলা প্রতিটি সাধারণ নেক কাজকে একটি ফরজের সমতুল্য এবং প্রতিটি ফরজ ইবাদতকে এই মাসে ৭০টি ফরজের সমান গুরুত্ব প্রদান করেছেন। ফলে মুমিন-মুসলমানগণ আল্লাহর রেজামন্দি হাসিলের জন্য এই মাসে বেশি বেশি দান-খয়রাত করেন। এতে করে একদিকে যেমন মানবতার কল্যাণ সাধিত হয়, অন্যদিকে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের পথ সুগম হয়। মহান রব্বুল আলামিন আমাদের সব অসহায়, বিপন্ন ও দুর্গত মানুষের সাহায্যে সহানুভূতিশীল হওয়ার এবং তাদের দুর্দশা লাঘবে সহমর্মিতার হাত প্রসারিত করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: ইসলামি চিন্তাবিদ, খতিব ও সাবেক চেয়ারম্যান, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ইত্তেফাক/কেকে