শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

রোজার জরুরি মাসায়েল

আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৩, ১১:৩৯

ক. রোজার নিয়তসংক্রান্ত মাসআলা  
১. রোজার নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত না করলে রোজা হবে না। অন্তরের দৃঢ় সংকল্পকে নিয়ত বলে। সুতরাং অন্তরে রোজা রাখার সংকল্প করলেই যথেষ্ট হবে। মুখে রোজার নিয়ত উচ্চারণ করা জরুরি নয়; তবে উত্তম। কেননা, রসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, সব আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। (সহিহ বুখারি)
২. সুবহে সাদিকের আগে রোজার নিয়ত করা উত্তম। তবে দ্বিপ্রহরের আগমুহূর্ত পর্যন্ত রোজার নিয়ত করা যাবে। (ইমদাদুল ফাতাওয়া)
৩. প্রতিটি রোজার জন্য আলাদা নিয়ত করতে হবে। একদিন নিয়ত করলে পুরো রমজান মাসের জন্য তা যথেষ্ট নয়। (ইলমুল ফিক্হ)
৪. কোনো মুকিম ব্যক্তি রমজান মাসে নফল রোজা, কাজা রোজা বা মান্নতের রোজার নিয়ত করলে তা আদায় হবে না; বরং রমজানের রোজাই আদায় হবে। তবে মুসাফির ব্যক্তি যদি রমজানের রোজা ছাড়া অন্য কোনো রোজা রাখেন, তাহলে তা সহিহ হবে। চাই তা নফল হোক, কাজা হোক বা মান্নতের হোক। (ফাতাওয়ায়ে শামী)
৫. রমজান মাসে সেহরি খাওয়াটাও রোজার নিয়ত বলে গণ্য হবে। তবে সেহরি খাওয়ার সময় যদি রোজা না রাখার সংকল্প করেন, তাহলে তা রোজার নিয়ত বলে গণ্য হবে না। (ইলমুল ফিক্হ)

খ. সেহরি সংক্রান্ত মাসআলা
১. সেহরি খাওয়া সুন্নাত। ক্ষুধা না থাকলে একটি খেজুর বা এক গ্লাস পানি দ্বারা হলেও সেহরি করা উত্তম।
২. রাতের শেষ লগ্নে সেহরি খাওয়া সুন্নাত। তবে এত দেরি করা ঠিক নয় যে, রোজা সহিহ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হয়।
৩. সেহরির সময় জাগ্রত হতে না পারলে, না খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
৪. কেউ যদি সময় আছে ভেবে সেহরি খায়, অতঃপর জানতে পারে সেহরি খাওয়ার সময় ছিল না। তবে এই রোজা কাজা করতে হবে, কাফফারা করতে হবে না।
৫. সেহরির শেষ সময় হলো সুবহে সাদিক। সুতরাং সুবহে সাদিকের পর পানাহার করা জায়েজ নেই। চাই আজান হোক বা না হোক।

গ. রোজার আধুনিক মাসায়েল
১. রোজা অবস্থায় মুখে কোনো ঔষধ ব্যবহার করে তা গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে। যদিও তা কম হয়।
২. সালবুটামল বা ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। তবে রোগী যদি অতি অসুস্থ হয়ে পড়ে; সে ক্ষেত্রে ইনহেলার ব্যবহারের মাধ্যমে রোজা ভাঙতে পারবে এবং পরবর্তী সময়ে রোজার কাজা করতে হবে। তবে কাফ্ফারা লাগবে না।
৩. রোজা অবস্থায় এন্ডোস্কপি করালে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে কোনো নল বা পাইপের মাধ্যমে পেটের ভেতর ওষুধ প্রবেশ করালে রোজা ভেঙে যাবে।
৪. নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যবহার করে গিলে না ফেললে রোজা ভঙ্গ হবে না।
৫. কানে ড্রপ, ওষুধ, পানি বা তেল ইত্যাদি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হবে না।
৬. চোখে ড্রপ বা মলম ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে না। এটা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত; যদিও তার স্বাদ গলায় উপলব্ধি হয়।
৭. নাকে অক্সিজেন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
৮. নাকে ড্রপ বা পানি দিয়ে ভেতরে টেনে নিলে রোজা ভেঙে যাবে।
৯. রোজা অবস্থায় রক্ত দিলে বা নিলে কোনো অবস্থাতেই রোজা ভঙ্গ হবে না।
১০. এনজিওগ্রাম করলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
১১. ইনসুলিন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না
১২. ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না। চাই গোস্তে নেওয়া হোক বা রগে।
১৩. রগে স্যালাইন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
১৪. সাপজিটররি-ভোল্টারিন বা ডুশ মলদ্বারে প্রবেশ করালে রোজা ভেঙে যাবে।
১৫. যোনিদ্বার বা পেশাবের রাস্তায় ওষুধ প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হবে না।
১৬. বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের টিকা নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না।

সূত্র: ফাতাওয়ায়ে শামী, হেদায়া, জাদিদ ফিকহী মাসায়েল, আহসানুল ফাতাওয়া এবং ইসলাম ও আধুনিক চিকিত্সা।

লেখক: মুফাসিসরে কুরআন, শিক্ষক, ইসলামী গবেষক ও খতিব

ইত্তেফাক/কেকে