রোববার, ১১ জুন ২০২৩, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

র‌্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু: বিচার ‌বিভাগীয় তদন্ত দাবি

আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ২২:৩৩

সম্প্রতি র‌্যাব হেফাজতে নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী জেসমিন সুলতানার নিহতের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও সাংবাদিক হয়রানী বন্ধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে রাজশাহীর বিশিষ্টজনেরা। 

শনিবার (১ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী সাংবাদকি ইউনিয়নের হল রুমে রাজশাহীর সচেতন নগরিকদের পক্ষে হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি গবেষক মাহবুব সিদ্দিক এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। 

এ সময় গবেষক মাহবুব সিদ্দিক বলেন, রাজশাহীর বিশিষ্টজনেরা র‌্যাবের হেফাজতে নিহত সুলতানা জেসমিনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন এবং ঘটনার সরেজমিন অনুসন্ধানের জন্য শুক্রবার (৩১ মার্চ) নওগাঁ সফর করেন। তারা সুলতানা জেসমিন কে জোরপূর্বক উঠিয়ে নেওয়ার ঘটনাস্থল নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকা পরিদর্শন করেন। সেখানে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও কথা বলেন। এ সময় নিহতের পরিবারের সদস্য, নওগাঁর কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, সাংবাদিক ও নওগাঁর বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত যুব নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সরেজমিন পরিদর্শন ও সাক্ষাৎকার শেষে সফরকারী রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ এই মর্মে মতামত ব্যক্ত করেন যে, সুলতানা জেসমিনের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তা সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। একজন নাগরিক যদি অপরাধের সঙ্গেও সম্পৃক্ত হন, তার বিচার পাবার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। সেখানে কোনো রকম আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়াই একজন নাগরিককে সরকারি একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে এবং তার উপস্থিতিতে উঠিয়ে নিয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে, যার পরিণতিতে তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন। এটি নিঃসন্দেহে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।

তিনি বলেন, জেসমিনের ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হয়েছে এদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মানবাধিকার রক্ষায় দুঃখজনকভাবে উদাসীন। রাষ্ট্রযন্ত্র মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েও তা রক্ষায় বার বার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।

নিহত জেসমিনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে অনুসন্ধানকারী দলের ধারণা জন্মেছে যে, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তারা ভীত সন্ত্রস্ত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

তাদের মতে, জেসমিনের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার না করে সরাসরি তুলে নিয়ে যাওয়া অপহরণের শামিল। পরে সরকারি বাহিনীর হেফাজতে তার মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত রহস্যময়। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমেই এর পেছনের মূল কারণ উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে। যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন ব্যক্তির এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার যে বর্ণনা ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তার যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার। কেন না নিহত জেসমিনও প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী ছিলেন।

তারা আরও বলেন, জেসমিন অপরাধ করে থাকলে খুব সহজেই বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেত। তা না করে র‌্যাবকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যবহার করে একজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা যে ভূমিকা নিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা আইনের ব্যত্যয় এবং অত্যন্ত দুঃখজনক।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে জেসমিনের নিহত হবার ঘটনার যথাযথ কারণ অনুসন্ধান এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম মাসউদ ও রাজশাহীর বারের এডভোকেট হাসনাত বেগসহ অনেকে ।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে ‘প্রথম আলো’র সম্পাদক মতিউর রহমান ও প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহার এবং সকল বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

 

ইত্তেফাক/পিও