ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা শনাক্ত করা, করলেও সেটা স্বীকার করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া অনেকের জন্যই কঠিন। বেলজিয়ামে এক পরীক্ষামূলক প্রকল্পে অভিনব উপায়ে এমন রোগীদের সাহায্যের চেষ্টা চলছে। বিষণ্ণতা মনের অন্ধকার এক দিক।
দৈনন্দিন জীবনে ডিপ্রশেনের প্রভাব যে কত কঠিন, দীর্ঘদিনের ভুক্তভোগী হিসেবে স্টেফান কঁপিয়ঁ তা হাড়ে হাড়ে বোঝেন। নিজের সমস্যার উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, 'জামাকাপড় বদলে বাইরে যাওয়া, অন্যদের সঙ্গে দেখা করা, কোনো যানে ওঠা, সবই কঠিন।'
তবে আজ তিনি তার থেরাপিস্টের কাছ থেকে ভিন্ন ধরনের প্রেসক্রিপশন পাচ্ছেন। তিনি ও তার ডাক্তার ভ্যাঁসঁ লুস্তিজিয়ে ছয় মাসের এক পরীক্ষামূলক প্রকল্পে অংশ নিচ্ছেন। তার আওতায় প্রেসক্রিপশন হিসেবে ডিপ্রেশনের রোগীদের ব্রাসেলস শহরে পছন্দের পাঁচটি মিউজিয়াম ঘুরতে বলা হয়।
ব্রুগমান হাসপাতালের চিকিৎসক ভ্যাঁসঁ লুস্তিজিয়ে বলেন, 'আমাদের মতে, এটা সবার জন্য উপকারী হতে পারে। কিন্তু কেউ কেউ নিজের বাসার চেনা পরিবেশ ছেড়ে বাইরে যেতে লজ্জা পায় বলে যেতে চায়নি। তবে বেশিরভাগ রোগী আগ্রহ দেখিয়েছেন।'
স্টেফান কঁপিয়ঁ এখন স্বেচ্ছায় এক অন্ধকার জায়গায় যাচ্ছেন। তিনি আমাদের ব্রাসেলসের ড্রেন বা নর্দমা মিউজিয়ামে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আর্ট থেরাপি নতুন কিছু নয়। ডিপ্রেশনের রোগীদের মিউজিয়ামে যাবার পরামর্শও নতুন নয়।
কিন্তু পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আওতায় এই প্রথম সেই পরামর্শকে প্রেসক্রিপশন হিসেবে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে রোগীরা সম্ভবত সত্যি বের হবার প্রেরণা পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে তারা বিনামূল্যে তিন জন পর্যন্ত মানুষকে সঙ্গে নিতে পারেন।
সেটা অত্যন্ত জরুরি কারণ, ডাক্তারদের মতে যে মানুষটি মনস্তাত্ত্বিক এবং সম্ভবত আর্থিক কষ্টেও ভুগছেন, তার জন্য সমাজের অংশ হবার অনুভূতি আবার জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করা উচিত৷ লুস্তিজিয়ে বলেন, 'রোগী কাছের মানুষ বা নিজের পরিবারের সঙ্গে যেতে পারেন। আমাদের জন্য সেটা একটা নতুনত্ব, তাই আমরাও খুব রোমাঞ্চ বোধ করছি।'
ব্রাসেলস শহরের ডেপুটি মেয়র ডেলফিন উবা এই প্রকল্প চালু করেন। কানাডায় একই রকম উদ্যোগের কথা শুনে তিনিও এমন পরীক্ষা চালাতে চেয়েছিলেন।
তিনি মনে করিয়ে দেন, 'বেলজিয়ামে দশ বছরে ডিপ্রেশনের রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এটা বিশাল সমস্যা। কত লোক যে বাইরে বা হয়তো ভেতরে কষ্ট পাচ্ছেন, আমরা তা জানি না। তাই এটা ঠিক, যে আমাদের হারানোর কিছু নেই। ডাক্তার ও রোগীদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। আর মিউজিয়ামে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে।'
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্টে ৯০০টিরও বেশি গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী স্বাস্থ্যের উপর শিল্পকলার ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। মার্চ মাসে পরীক্ষামূলক প্রকল্প শেষ হবে বটে, কিন্তু উবা বলেন যে চূড়ান্ত পরিসংখ্যানের আগেই বিশাল মাত্রায় ইতিবাচক সাড়া পেয়ে তিনি সেই কর্মসূচি আরও সম্প্রসারণের আশা করছেন।
ডেলফিন উবা বলেন, 'অন্য কয়েকটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, অনেক ডাক্তারও প্রকল্পে যোগ দিতে চেয়েছেন। মানুষের মধ্যে অনেক উৎসাহ দেখতে পাচ্ছি। এই কর্মসূচি সম্পর্কে মানুষকে বোঝাতে এবং তাদের এখানে আসার সাহস দিতে হয়তো আরও সময় লাগবে। তবে আমার মতে, কয়েকজন মানুষ উপকার পেলেও সেটা খুব ইতিবাচক ফল।'
কয়েকজন দর্শনার্থী প্রেসক্রিপশন ছাড়াই উপকার পাচ্ছেন। স্টেফান কঁপিয়ঁ এর অভিজ্ঞতা দেখিয়ে দিচ্ছে, যে চাঙ্গা বোধ করতে 'সুন্দর' কিছু দেখারও প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, 'আমি অনেক ভালো বোধ করছি, সন্দেহ নেই। নিজের সমস্যা ভুলে পৃথিবীর বিস্ময় দেখছি।'
পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে মিলে তিনি যা শিখেছেন, তা সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে তিনি আগ্রহী। এভাবে তিনি আরও কিছুটা অন্ধকার দূর করতে চান।