২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে মোট ৬ কোটি ৭০ লাখ শিশু টিকাদান কার্যক্রম থেকে বাদ পড়েছে। ১১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশেও এই মাত্রা কমেছে। এক্ষেত্রে কিছু ভৌগোলিক ও আর্থ-সামাজিক বৈষম্য রয়ে গেছে। অনেক শিশু টিকার নির্ধারিত বা সঠিক সময়ে সঠিক ডোজ পায়নি। জাতীয় পর্যায়ের তুলনায় দুর্গম এলাকা ও শহরের বস্তিগুলোতে টিকাদানের হার কম ।
২০২০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ মহামারির কারণে লকডাউন শুরু হলে প্রাথমিক অবস্থায় স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোর ওপর প্রভাব পড়ে। পরবর্তী মাসগুলোতে টিকার আওতা ৫০ শতাংশের নিচে নেমে আসে। তবে ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার টিকাদানের হার কমার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ২০২০ সালের অক্টোবর নাগাদ মাসিক টিকাদানের হার কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী সময়ের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। দেশে টিকাদানের হার বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে, যেখানে প্রায় ৮৪ শতাংশ শিশু তাদের ১২ মাস বয়সের মধ্যেই টিকা গ্রহ করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ইউনিসেফ ‘দি স্টেট অব দি ওয়ার্ল্ডস চিলড্রেন ২০২৩: ফর এভরি চাইল্ড, ভ্যাকসিনেশন’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ অধ্যায়ে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
এছাড়া সমীক্ষায় জানা যায়, বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচির জন্য শৈশবকালীন সব টিকা সংগ্রহ ও সরবরাহ করে ইউনিসেফ। ২০২২ সালে ইউনিসেফ ৮ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের ১৭ কোটি ৩০ লাখ শৈশবকালীন টিকার ডোজ সরবরাহ করেছে বাংলাদেশে। এই টিকাগুলো কিনতে অর্থের জোগান দিয়েছে ‘ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, গ্যাভি’ ও বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশে ইউনিসেফ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, টেকসই রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং একটি সুপ্রশিক্ষিত ও অনুপ্রাণিত স্বাস্থ্য কর্মীবাহিনী থাকলে কী করা সম্ভব, বাংলাদেশে শিশু টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য তারই প্রমাণ। শৈশবকালীন টিকাদানের ক্ষেত্রে নিজস্ব অর্থায়নের দিকে এগোতে থাকা দেশটিকে ইউনিসেফের দেওয়া সহায়তা আগামী বছরগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।
সমীক্ষা চালানো ৫৫টি দেশের মধ্যে ৫২টি দেশে কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে শিশুদের জন্য টিকার গুরুত্ব সম্পর্কে জনসাধারণের ধারণা হ্রাস পেয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যে ৬ কোটি ৭০ লাখ শিশু নিয়মিত টিকাদান থেকে বাদ পড়েছিল, তাদের মধ্যে ৪ কোটি ৮০ লাখ শিশুটি নিয়মিত টিকার একটি ডোজও পায়নি, যা ‘জিরো ডোজ’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশে ‘জিরো- ডোজ’ শিশুর সংখ্যা ৩০ হাজার বা এক বছরের কম বয়সী শিশুদের ১ শতাংশেরও কম। যদিও এটি দেশের টিকাদান কর্মসূচির একটি উল্লেখযোগ্য অর্জনকে তুলে ধরে, তবে বিচ্ছিন্নভাবে টিকা না পাওয়া শিশুদের বিষয়টিও এতে উঠে আসে।
‘দ্য ভ্যাকসিন কনফিডেন্স প্রজেক্টে’-এর সংগ্রহ করা এবং ইউনিসেফ প্রকাশিত নতুন উপাত্ত অনুসারে, সমীক্ষা চালানো দেশগুলোর মধ্যে শুধু চীন, ভারত ও মেক্সিকোতেই টিকার গুরুত্ব সম্পর্কিত ধারণা আগের মতোই অটল আছে বা ক্ষেত্রবিশেষে বেড়েছে। মহামারি শুরু হওয়ার পর বেশির ভাগ দেশে ৩৫ বছরের কম বয়সী মানুষ ও নারীরা শিশুদের জন্য টিকা সম্পর্কে তাদের আস্থা কমার কথা বেশি জানিয়েছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, মহামারির চূড়ান্ত অবস্থায় বিজ্ঞানীরা দ্রুত টিকা তৈরি করেছিলেন, যা অগণিত জীবন বাঁচায়। কিন্তু এই ঐতিহাসিক অর্জন সত্ত্বেও, সব ধরনের টিকা নিয়ে ভয় ও বিভ্রান্তি ভাইরাসের মতোই ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। এই উপাত্ত একটি উদ্বেগজনক সতর্কতা সংকেত। আমরা নিয়মিত টিকাদানের প্রতি মানুষের অনাস্থাকে মহামারির মারাত্মক পরিণতির অংশ হতে দিতে পারি না। অন্যথায়, মৃত্যুর পরবর্তী ঢেউয়ে যুক্ত হতে পারে হাম, ডিপথেরিয়া বা অন্যান্য প্রতিরোধযোগ্য রোগে আক্রান্ত শিশুরা। ২০২১ সালের শেষ নাগাদ ভারত ও নাইজেরিয়ায় (দুটি দেশেই এ সময়ে জন্মগ্রহণ করা শিশুর সংখ্যা অনেক বেশি) ‘জিরো-ডোজ’ শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল। তবে ‘জিরো-ডোজ’ শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধির দিক থেকে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল মিয়ানমার ও ফিলিপাইন।