মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
The Daily Ittefaq

বন্যপ্রাণী আইন কঠোর করায় উগান্ডায় হাতিরা ফিরছে

আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৩, ১৫:২৬

২০১৯ সালে উগান্ডায় বন্যপ্রাণী রক্ষার আইন কঠোর করা হয়। সে কারণে দেশটিতে হাতির সংখ্যা বেড়েছে। এবার সাদা গণ্ডারদেরও বনে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে। প্রায় ৪০ বছর আগে শিকারিদের কারণে তারা হারিয়ে গিয়েছিল। বন্যপ্রাণী শিকারিদের হাত থেকে উগান্ডার ন্যাশনাল পার্ক রক্ষায় কাজ করেন মার্গারেট কাসুম্বা। কাজটা খুব বিপজ্জনক। 

তিনি বলেন, 'মাঝেমধ্যে আমাদের এমনসব শিকারির সঙ্গে লড়তে হয় যাদের কাছে আমাদের মতোই অস্ত্র থাকে। সশস্ত্র বন্যপ্রাণী শিকারি। অনেক সময় প্রাণী শিকার করতে তারা অস্ত্র নিয়ে আসে। আমাদেরও অস্ত্র রাখতে হয় এবং তাদের সঙ্গে লড়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়।'

২০১৯ সালে উগান্ডায় বন্যপ্রাণী রক্ষার আইন কঠোর করা হয়।

রেঞ্জারদের কঠোর পরিশ্রমের কারণে উগান্ডায় হাতির সংখ্যা বেড়ে এখন পাঁচ হাজার পর্যন্ত হয়েছে। তবে যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। ২০১৯ সালে কর্তৃপক্ষ রেকর্ড পরিমাণ হাতির দাঁত উদ্ধার করেছিল, ওজনে যা তিন টনের বেশি ছিল। 

দাঁতের এই পরিমাণ থেকে ধারণা করা যায়, শিকারিদের হাতে সাড়ে তিনশর বেশি হাতি মারা পড়েছে। কাসুম্বা বলেন, 'প্রতি বছর গড়ে আমরা প্রায় চারশজনের বিচার করি। বন্যপ্রাণী পাচার, শিকার, অবৈধভাবে বনে প্রবেশসহ নানা অপরাধে এসব বিচার হয়ে থাকে।'

রেঞ্জারদের কঠোর পরিশ্রমের কারণে উগান্ডায় হাতির সংখ্যা বেড়ে এখন পাঁচ হাজার পর্যন্ত হয়েছে।

ন্যাশনাল পার্কগুলোর মধ্যে নিয়মিত সশস্ত্র টহল দেয়ার মাধ্যমে শিকারিদের সব সময় চাপে রাখতে হয়। উগান্ডার একটি বড় লক্ষ্য আছে, বনে সাদা গণ্ডার ফিরিয়ে আনতে চায় দেশটি। ৪০ বছর আগে শিকারিদের কারণে তারা হারিয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে উগান্ডার একমাত্র জিওয়া অভয়ারণ্যে সাদা গণ্ডার আছে। ৩৩টি গণ্ডারকে সারাক্ষণ পাহারা দিয়ে রাখেন রেঞ্জাররা। 

মার্গারেট কাসুম্বা বলেন, 'আমরা আমাদের বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়িয়েছি, আরও বাড়াচ্ছি। নতুন কয়েকজন এখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। শিগগির তা শেষ হবে। এরপর তারা দলে যোগ দিয়ে বন্যপ্রাণী রক্ষায় কাজ শুরু করবে। অপরাধ ধরার কৌশলও আমরা উন্নত করেছি। অপরাধ শনাক্ত করতে আমাদের তদন্ত বিভাগকে আধুনিক যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে।'

বর্তমানে উগান্ডার একমাত্র জিওয়া অভয়ারণ্যে সাদা গণ্ডার আছে।

তিনি জানিয়েছেন, শিকারিদের ধরে বিচার করাও গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৯ সালে সরকার বন্যপ্রাণী শিকার ও বেচাকেনার অপরাধের শাস্তি বাড়িয়েছে। কাসুম্বা বলেন, 'নতুন আইনের কারণে আমাদের শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে। কারণ অপরাধীরা এখন জানেন, অপরাধ করে ধরা পড়লে তাদের কী ধরনের শাস্তি পেতে হবে।'

উগান্ডায় বন্যপ্রাণী শিকার, পাচার ও এসব প্রাণীদের দিয়ে তৈরি পণ্য বিক্রির শাস্তি দিতে বিশেষ আদালত গঠন করা হয়েছে। অপরাধের শাস্তিও এখন অনেক বেশি। সম্প্রতি হাতির দাঁতের এক ব্যবসায়ীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

উগান্ডায় বন্যপ্রাণী শিকার, পাচার ও এসব প্রাণীদের দিয়ে তৈরি পণ্য বিক্রির শাস্তি দিতে বিশেষ আদালত গঠন করা হয়েছে।

কাসুম্বা বলেন, 'আমার কাছে এটা বড় অর্জন, কারণ আমরা সবাই এটা চেয়েছিলাম। বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধের জন্য আমাদের একটা আদালত আছে। এটা আমার কাছে একটা অনেক বড় অর্জন। আগে হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো মামলার সঙ্গে আমাদের লড়তে হত। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার সঙ্গে বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত মামলার কথা আপনি ভাবতে পারেন? কোন শুনানিতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে বলে আপনার মনে হয়?'

সাম্প্রতিক সময়ে হাতির সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া বিপন্ন প্রায় পাহাড়ি গরিলার সংখ্যাও কিছুটা বেড়েছে। মার্গারেট কাসুম্বা এখন আশা করছেন সাদা গণ্ডাররাও শিগগির বনে ফিরবে।

ইত্তেফাক/ডিএস
 
unib