শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মাদক কারবারিদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, অস্ত্রসহ আটক ১৩

আপডেট : ০১ মে ২০২৩, ২০:১৪

মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় ‘মাদকের স্বর্গরাজ্য’ খ্যাত চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে আবারও মাদক কারবারিদের মধ্যে রাতভর দফায় দফায় ব্যাপক সংষর্ষ হয়েছে। 

রোববার (৩০ এপ্রিল) রাতভর সংঘর্ষের পর সোমবার সকালে সেখানে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালিয়ে ১৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় মাদক ও দেশীয় অস্ত্র জব্দসহ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি চিহ্নিত মাদক স্পট। 

সোমবার (১ মে) সকাল ছয়টা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত টানা সাড়ে ৩ ঘণ্টাব্যাপী গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও থানা পুলিশের সমন্বয়ে জেলা পুলিশের এই বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। এর আগে রোববার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চনপাড়ায় মাদক কারবারিদের কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমার নেতৃত্বে পরিচালিত এই মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে অন্তত দুই শতাধিক ডিবি ও পুলিশ সদস্য অংশ নেয়।

মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। ছবি: ইত্তেফাক

চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকার বাসিন্দারা জানান, মাদক সংক্রান্ত বিরোধের জেরে রোববার সন্ধ্যায় চনপাড়ার চিহ্নিত মাদক কারবারি রায়হান ও তার লোকজন তাদের প্রতিপক্ষ মাদক কারবারি জয়নাল আবেদীনের সহযোগী মারুফকে ব্যাপক মারধর করে। এ ঘটনার পর রায়হানের পক্ষ নিয়ে মাদক কারবারি শমসের আলী ও শাহাবউদ্দিন এবং মারুফের পক্ষ নিয়ে জয়নাল আবেদীনের লোকজন দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষের লোকজনের বাড়িঘর, দোকাপাটে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হয় বলেও স্থানীয়রা জানান। 

তাদের দাবি, এক সময় পুরো চনপাড়ায় আধিপত্য ও মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করতেন সাবেক ইউপি সদস্য বজলুর রহমান। সম্প্রতি তার মৃত্যুর পর তারই সহযোগীরা আধিপত্য ধরে রাখতে এক পক্ষ আরেক পক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। 

স্থানীয়রা জানান, হত্যা, মাদক, ডাকাতিসহ অন্তত ২৬টি মামলার আসামি সাবেক ইউপি সদস্য বজলুর রহমান ওরফে বজলু মেম্বার গত বছর বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর পর আলোচনায় এলে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হন। পরে গত ৩১ মার্চ কারা তত্ত্বাবধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বজলুর রহমানের মৃত্যুর পর চনপাড়া এলাকায় মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠে। ফলে তাদের নিজেদের কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। গত ১১ এপ্রিল শমসের আলী ও শাহাউদ্দিনের বাহিনীর সঙ্গে জয়নাল আবেদীনের বাহিনীর মধ্যে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সংঘর্ষে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়। তবে গুলিবিদ্ধ তিনজনই ছিল জয়নালের সহযোগী।

এদিকে সোমবার সকালে চনপাড়ায় মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শেষে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা জানান, রাতে মাদক কারবারিদের কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সকালে ডিবি ও পুলিশের সমন্বয়ে সেখানে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি চিহ্নিত মাদকস্পট ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, মাদকের এই স্পটগুলো নিয়ন্ত্রণ করে জয়নাল, শমসের, শাহাবউদ্দিন, রায়হান, ইয়াসমিন, নাজমা, রহিমা, শাওন, শাহ্ আলম নামে চিহ্নিত কয়েকজন মাদক কারবারি। এই মাদক কারবারিরা বর্তমানে পলাতক থাকলেও তাদের সহযোগী ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে কয়েকজন গত রাতের সংঘর্ষের ঘটনাতেও জড়িত ছিল। অন্যরা মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। পুলিশের এই বিশেষ অভিযানে মাদক, চায়নিজ কুড়াল, রাম দা, টেঁটা ও সুইচযুক্ত আধুনিক চাকুসহ বেশ কিছু দেশীয় ধারালো অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে পুলিশের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

ইত্তেফাক/পিও