শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মেক্সিকো সীমান্তে সাময়িকভাবে ১৫০০ সেনা পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র

আপডেট : ০৩ মে ২০২৩, ১১:২১

মেক্সিকো সীমান্তে ১ হাজার ৫০০ সেনা মোতায়েন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রগামী অভিবাসীদের প্রত্যাশিত উত্থানের আগে প্রাথমিকভাবে তাদের দক্ষিণ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য সেনাদের সেখানে প্রেরণ করা হচ্ছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগনের বরাত দিয়ে এ জানায় ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অভিবাসীদের প্রত্যাশিত বৃদ্ধির আগে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ তাদের দক্ষিণ সীমান্তে ১ হাজার ৫০০ সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। সীমান্ত এজেন্টদের সহায়তার জন্য ইতোমধ্যে মোতায়েন করা ২ হাজার ৫০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্যের সঙ্গে ১ হাজার ৫০০ সেনা যোগ দেবে।

মেক্সিকো সীমান্তে ১ হাজার ৫০০ সেনা মোতায়েন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

টাইটেল-৪২ নামে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিমালার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১১ মে। মূলত এই নীতির কারণেই মার্কিন সরকার অনিবন্ধিত অভিবাসীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে বহিষ্কারের ক্ষমতা ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছিল। 

আর এখন যেহেতু ১১ মে এর মেয়াদ শেষ হচ্ছে, কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রগামী অভিবাসীদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। মঙ্গলবার (২ মে) একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্যাট্রোল (সিবিপি) কর্মকর্তাদের কাজে 'সমর্থন' দিতে ৯০ দিনের জন্য এই অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হবে।

টাইটেল-৪২ নামে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিমালার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১১ মে।

এই বাহিনীগুলো কোনো আইন প্রয়োগ করবে না, পরিবর্তে পরিবহন, মাদক সনাক্তকরণ, ডেটা এন্ট্রি ও অন্যান্য কাজে সহায়তা করবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই অতিরিক্ত সামরিক কর্মীরা 'উল্লেখযোগ্য সক্ষমতা শূন্যতা' পূরণ করবে।

পেন্টাগনের মুখপাত্র জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে জানান, তার সংস্থা গত ২২ বছরের মধ্যে ১৮ বছর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সমর্থনে কাজ করেছে। আর ২০০৬ সাল থেকে তারা প্রতি বছর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে। সীমান্তে মোতায়েনের জন্য এই সেনারা ১০ মে এর আগে সেখানে পৌঁছাবে।

পেন্টাগনের মুখপাত্র জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার

অভিবাসীদের ঢেউয়ের মুখে সীমান্ত এজেন্টদের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সিবিপির শীর্ষ কর্মকর্তা ট্রয় মিলার গত মাসে কংগ্রেসকে বলেছিলেন, টাইটেল-৪২ এর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রতিদিন সীমান্তে ১০ হাজারেরও বেশি অভিবাসীর মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তার এজেন্সি।

এর আগে ২০২১ অর্থবছরে দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশকারী অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ১৯৬০ সালের পর সর্বোচ্চ। আর গত বছর এ সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৭ লাখ ৬০ হাজার। যা ছিল আরেকটি রেকর্ড।

সিবিপির শীর্ষ কর্মকর্তা ট্রয় মিলার

উল্লেখ্য, টাইটেল-৪২ অ্যাক্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। এই আইনে যে কোনো শরণার্থী, উদ্বাস্তু, আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসী প্রত্যাশীকে নোটিশ ছাড়াই বহিষ্কারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এমনকি সীমান্তে অভিবাসী-শরণার্থীদেরও থামানো যেতে পারে।

২০২০ সালে করোনা মহামারির মুখে এই আইন কার্যকর করে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে এই আইন বহাল থাকবে কি না, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা রয়েছে। ১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বিতর্কিত টাইটেল-৪২ অ্যাক্ট পাস হয়।

টাইটেল-৪২ অ্যাক্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে।
 
জনস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখেই এই আইন করা হয়েছিল। কিন্তু ২০২০ সালে ট্রাম্প প্রশাসন প্রথম আইনটি প্রণয়ন করে। এই আইনে ভিসাহীন অ-মার্কিন নাগরিকদের নোটিশ ছাড়াই বহিষ্কারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন আদালতকে জানায়, এ পর্যন্ত এই আইন আড়াই লাখ বার প্রয়োগ করা হয়েছে। এই আইন অনেক শরণার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে বাধা দেয়।

ইত্তেফাক/ডিএস