একজন মিডওয়াইফ গর্ভাবস্থায়, প্রসব বেদনা ও প্রসব শুরুর অবস্থায় নারীর পরামর্শ ও নবজাতকের যত্ন নিতে সহায়তা করেন। প্রসূতির স্বাস্থ্য ও শিশুর পরিচর্যাবিষয়ক উপদেশ দেন। একজন মিডওয়াইফ মা ও সন্তান উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ। গর্ভাবস্থা বা জন্মকালীন মেডিক্যাল জটিলতা দেখা দিলে তিনি গাইনি চিকিৎসক দেখানোর জন্য পরামর্শ দেন। সব মিলেয়ে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে সহায়তায় মিডওয়াইফরা দেশের হাসপাতাল ও কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বড় ভূমিকা রাখছেন।
প্রসূতি মা ও নবজাতকের জীবন বাঁচানোর কাজে নিয়োজিত মিডওয়াইফদের ভূমিকা তুলে ধরতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ ৫ মে শুক্রবার উদযাপিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ বা ধাত্রী দিবস-২০২৩’। ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন অব মিডওয়াইভস (আইসিএম)’ এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে—‘তথ্য থেকে বাস্তবে :সব মিডওয়াইফ একসাথে’। এবারের প্রতিপাদ্যের বিশেষ তাৎপর্য হলো, বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই লক্ষ্যমাত্রা (এসজিডি) অর্জনে মিডওয়াইফদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতিতে বাংলাদেশ তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করলেও এ ব্যাপারে এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়ন, নারীর শিক্ষার হার ও ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি এবং সন্তান জন্মদানে সামর্থ্যের (ফার্টিলিটি) হার হ্রাস—এগুলো হচ্ছে মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাসের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
হেলথ বুলেটিনের সবশেষ তথ্যমতে, ২০২০ সালে সন্তান প্রসবকালীন প্রতি লাখে মাতৃমৃত্যু ছিল ১৬৩ জন। কিন্তু জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা ছিল এই মৃত্যু প্রতি লাখে ১২১ জনে নামিয়ে আনা। এছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু কমিয়ে প্রতি লাখে ৮৫ জনে নামিয়ে আনতে হবে। ২০৩০ সালের টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ৭০ জনে নামিয়ে আনতে হবে। দক্ষ মিডওয়াইফদের তত্ত্বাবধানে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব ৮০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। কিন্তু দেশে এখন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির হার ৫৩ শতাংশ। প্রতি হাজারে ১৭৩টি মাতৃমৃত্যু হচ্ছে। এর কারণ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় মিডওয়াইফের অপ্রতুলতা রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার মিডওয়াইফ পদ তৈরি হলেও ২ হাজার ৫৫৭টি পদে কাজ করছে। এছাড়া তাদের কাজের স্বীকৃতির অভাব রয়েছে। এখনো মানুষ মিডওয়াইফদের নার্স ভাবে। সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা মিডওয়াইফদের কার্যপরিধি সম্পর্কে কম জানে। সবখানে কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নেই। একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। পেশাগত উন্নয়ন ও পদোন্নতিতে প্রশাসনিক কাঠামো পদ সৃষ্টির সংকট আছে।
বাংলাদেশ মিডওয়াইফারি সোসাইটির সভাপতি আসমা খাতুন বলেন, একজন মিডওয়াইফকে মিডওয়াইফারি চর্চার জন্য ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন অব মিডওয়াইভসের (আইসিএম) আবশ্যকীয় যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এ কারণে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমাতে দক্ষ ও পেশাদার মিডওয়াইফরা মা ও নবজাতকের মৃত্যু রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তারা গুণগত সেবা নিশ্চিত করেন। মা ও শিশুমৃত্যুর হার কমাতে ভূমিকা রাখেন। বয়ঃসন্ধিকালের কিশোরীদের পরামর্শ দেন। এসডিজি অর্জনে মিডওয়াইফদের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ মিডওয়াইফারি সোসাইটির সাবেক সহসভাপতি ও ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন অব মিডওয়াইভস (আইসিএম)-এর ইয়াং মিডওয়াইফ লিডার সৈয়দা মাহফুজা ঝুমু বলেন, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) প্রসূতি ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধির পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে ৮৭ শতাংশ স্বাভাবিক প্রসব শুধু দক্ষ মিডওয়াইফ দ্বারা সম্ভব।
আন্তর্জাতিক মিডওয়াফারি দিবস উদযাপনে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আজ ঢাকা নার্সিং কলেজ প্রাঙ্গণে কেন্দ্রীয়ভাবে দিবসটি উদযাপন করা হবে। সকালে চিকিৎসক, শিক্ষক মিডওয়াইফ ও নার্সদের নিয়ে সচেতনতামূলক শোভাযাত্রা হবে। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও এসআইডিএর উদ্যোগে ‘স্বাভাবিক প্রসবে মিডওয়াইয়াফদের ভূমিকা’ শীর্ষক অনলাইন সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেমিনারে বাছাইকৃত মিডওয়াইফরা প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন। পাশাপাশি দেশের সরকারি-বেসরকরি হাসপাতাল ও মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সচেতনতামূলক প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন, পোস্টার, ব্যানার ও লিফলেট বিতরণ করা হবে।