বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৬ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় মৃত্যুঝুঁকিতে ঢাবি শিক্ষার্থীরা

আপডেট : ১১ মে ২০২৩, ১৬:৫১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রতিষ্ঠাকালীন হলগুলোর একটি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। প্রায় শত বছরের পুরোনো হওয়ায় বাইরে থেকে হলটিকে ফিটফাট দেখালেও ভেতরে এর অবস্থা খুবই নাজুক। বিশেষজ্ঞরা যেকোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতায় চরম মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, ১৯৩১ সালে নির্মিত সলিমুল্লাহ মুসলিম হল বেশ পুরনো ও বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দেওয়ায় বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন প্রকৌশলী ও বুয়েটের তিনজন বিশেষজ্ঞ নিয়ে হলটি পরিদর্শন করেন। এ সময় বারান্দাসহ একাধিক জায়গায় ফাটল দেখা দেওয়ায় বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শে উপাচার্য হলটিকে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিলেন। একইসঙ্গে বারান্দায় থাকা শিক্ষার্থীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে কক্ষ বরাদ্দ দিয়ে বারান্দা খালি করা হবে বলে জানান। তার এ আশ্বাসের দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পার হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

পরবর্তীতে ২০২২ সালের ৯ মে হলের তৎকালীন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ৩৬টি কক্ষ ও বারান্দাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে কক্ষ ও বারান্দায় অবস্থান করা ছাত্রদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। ঝুঁকিপূর্ণ ৩৬টি কক্ষে থাকা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন হলে ভাগাভাগি করে গত বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্থানান্তরের কথা বললেও তা আদৌ বাস্তবায়ন হয়নি।

বর্তমানে এসএম হলের বারান্দার ফাটল। ছবি: ইত্তেফাক

একই বছরের ২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম শিকদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে হলের ৩৬টি কক্ষকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করা  হয়। এতে বলা হয়েছিলো, বিশেষজ্ঞদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছাত্রদের নিরাপত্তার স্বার্থে নিচতলা ও দোতলার বারান্দার ফাটল সংলগ্ন ৩৬টি কক্ষ জরুরি ভিত্তিতে খালি করা প্রয়োজন। বিষয়টি অতীব জরুরি। 

সরেজমিনে হলটিতে ঘুরে দেখা গেছে, হলের দোতলার বারান্দায় বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। আর সেই ফাটল ঠেকাতে লোহার পিলার দিয়ে কোনোরকমে তা ঠেকানো হচ্ছে। এছাড়া হলের প্রায় প্রত্যেকটা কক্ষের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। এসব পলেস্তারা শিক্ষার্থীদের গায়ে পড়ে প্রায়শই আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, প্রতিনিয়ত এসব ফাটল ও পলেস্তারা খসে পড়া বাড়ছে।

লোহার রড দিয়ে রাখা এসএম হলের রাবান্দা। ছবি: ইত্তেফাক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বারান্দা ও গণরুমে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, ৩-৪ বছর হয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের। এখনো হলে রুম পাইনি। শীত-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বারান্দায় থাকতে হচ্ছে। অন্যত্র সরে যাওয়ার সামর্থ্য থাকলে কি আর এসব জায়গায় কেউ থাকবে। কয়েকদিন পর পর নতুন নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর একটিও বাস্তবায়ন করা হয় না। এখন আবার নতুন করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দেখা যাক, কর্তৃপক্ষের এবার বোধোদয় হয় কিনা!

তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর ও প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি।

হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. মুজিবুর রহমান বলেন, আমি দায়িত্বে থাকাকালীন হলের কিছু সংস্কার কাজ করেছি। ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষগুলো সংস্কার ও সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্তও নিয়েছিলাম। তবে পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলটিকে মাস্টারপ্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত করা তা আর করা হয়নি।

লোহার রড দিয়ে রাখা এসএম হলের রাবান্দা। ছবি: ইত্তেফাক

বর্তমান প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইকবাল রউফ মামুন বলেন, বারান্দায় থাকা শিক্ষার্থীদের স্থানান্তরের বিষয়ে আমি দায়িত্বে আসার আগেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের কয়েকবার বারান্দা থেকে সরে যেতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তবুও তারা যায়নি। এখন ৩০ মে পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন কক্ষে অবস্থান করা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়ে সেখানে ‘বারান্দা ও ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষগুলোর’ বৈধ শিক্ষার্থীদের স্থানান্তর করা হবে। খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু হলে ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হলে সেখানে শিক্ষার্থীদের স্থানান্তর করা হবে। কবে এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষ ও বারান্দায় অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়েছে। 

পলেস্তারা পড়া এসএম হলের ছাদ। ছবি: ইত্তেফাক

তারা কোথায় থাকবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিজ উদ্যোগে বাসা নিয়ে কোথাও থাকবে। সামর্থ্য থাকলে আমি তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিতাম। অন্যান্য হলেও থাকার জায়গা অপ্রতুল। তবে দু’বছর ধরে শিক্ষার্থী বরাদ্দ না দেওয়ায় বারান্দায় কিছুটা চাপ কমেছে।

ইত্তেফাক/পিও