আল-জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ হত্যাকাণ্ডের এক বছর পার হয়ে গেছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ১১ মে পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের খবর সংগ্রহের সময় আবু আকলেহ গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
পরে গত বছরের ডিসেম্বরে তার পরিবার ও আল-জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক আবু আকলেহ হত্যার জন্য দায়ীদের তদন্ত ও বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানায়। হত্যাকাণ্ডের ছয় মাসের তদন্তের পর প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ, ভিডিও ফুটেজ ও বিভিন্ন নতুন প্রমাণ সংগ্রহ করে আইসিসির কাছে একটি ডসিয়ার জমা দেওয়া হয়।
আইসিসি অভিযোগটি গ্রহণ করলেও বিচারে আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এক বিবৃতিতে আইসিসি জানিয়েছে, সাংবাদিকদের ওপর ইচ্ছাকৃত হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল।
শিরিন হত্যা মামলায় আইসিসিতে নিযুক্ত আল-জাজিরার আইনজীবী রডনি ডিক্সন কেসি বলেন, 'মামলার অগ্রগতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। মামলার বিবরণে প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি, ভিডিও ফুটেজ এবং যেসব প্রমাণ সংযোজন করা হয়েছে, তা সহজেই দায়ী ব্যক্তিদের সনাক্ত করতে পারে। আমরা আশা করি, আর দেরি না করে ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলার বিচার কাজ দ্রুত সম্পন্ন হবে।'
আবু আকলেহ জেরুজালেমে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিস্তিনের দ্বৈত নাগরিক ছিলেন। তার পরিবারের সদস্যরা বেথলেহেমের আরব ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে সময় কাটিয়েছেন। নিউ জার্সিতে বসবাসরত তার মায়ের পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন।
তিনি ২৫ বছর ধরে আল-জাজিরার সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত বছরের ১১ মে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনি। আকলেহ সে সময় পেশাদার ডিউটিতে ছিলেন এবং তার জ্যাকেট ও হেলমেটে 'প্রেস' লেখা ছিল।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রায় পাঁচ মাস পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো হত্যার কথা স্বীকার করেন তারা।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, শিরিন আবু আকলেহের তাদের বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার 'উচ্চ সম্ভাবনা' রয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সেনাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হবে না বলে জানিয়েছেন তারা।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে দেখা করে আবু আকলেহ হত্যার বিচার চেয়েছিলেন তার পরিবার।