বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রধান শিক্ষক-সভাপতির বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

আপডেট : ১৬ মে ২০২৩, ২২:৩৬

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়র ইউনিয়নের নজির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান ও সভাপতি রঞ্জু আহামেদ ওরফে ড্রেজার খাজার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, আর্থিক অনিয়ম ও বেপরোয়া কর্মকাণ্ডসহ নিয়োগ বাণিজ্যে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসহ ভুক্তভোগীরা ।

জানা যায়, গোপন কমিটির সভাপতি রঞ্জু আহামেদ ওরফে ড্রেজার খাজার মদদে অনিয়ম করে যাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান। সভাপতির অত্যন্ত আস্থাভাজন প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান সরকারি বিধি ভঙ্গ করেও সম্প্রতি চারটি পদে জনবল নিয়োগ দিয়ে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে জানা যায়। 

জনবল নিয়োগের জন্য মার্চের ১ তারিখে দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকায় বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। চারটি পদে প্রায় ৮০ জন প্রার্থী আবেদন করেন। আবেদনকৃতদের মধ্য থেকে মাত্র ১৭/১৮ জন্য আবেদনকারীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। বাকি আবেদনকৃতরা প্রবেশ পত্রে রোল নং ও কেন্দ্রের নাম না থাকায় পরীক্ষা দিতে পারেনি। 

প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির কারসাজিতে ১৬ এপ্রিল পাতানো নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন বিকালেই চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। কম্পিউটার ল্যাব সহকারী অপারেটর পদে প্রধান শিক্ষকের ছেলে মো. হাফিজুর ইসলাম। আয়া পদে সভাপতি রঞ্জু আহামেদের বোন মোছা. খালেদা ও পরিছন্নকর্মী পদে ভগ্নিপতি মো. মাহাবুর রহমান এবং নিরাপত্তাকর্মী মো. ছানোয়ার হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

অন্যান্য আবেদনকারীদের কাছ থেকে ওই সব পদে জন্য মোটা অংকের অর্থগ্রহণ করে ও চাকরি দেননি বলে জানা যায়। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকতাদের আত্মীয়-স্বজনকে নিয়োগ প্রদান করেন। আবেদনকারীদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শাহ আলম সিদ্দিকীর ছেলে জয় সিদ্দিকীর নিকট থেকে ছয় লাখ টাকা, বাবুল হোসেনের ছেলে কাবিল হোসেনের নিকট পাচঁ লাখ টাকা গ্রহণ করেন প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। 

বিদ্যালয়ের জমিদাতা নজর আলীর ছেলে মো. দুলাল হোসেনের নিকট মোটা অংকের টাকা দাবি করেন প্রধান শিক্ষক। দুলাল দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় তাকে রোল নম্বর ও পরীক্ষা কেন্দ্রের নাম উল্লেখ ছাড়াই প্রবেশ পত্র দেওয়া হয়। যার ফলে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে নাই সে। এমন অভিযোগ করেন আরও অনেক প্রার্থী। 

এ ব্যাপারে ১৩ এপ্রিল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত ৪ সদস্য মো. বাবুল আক্তার, মো. সাজ্জত হোসেন, এম আজিজুল হক পান্না ও মো. জমির উদ্দিন মাষ্টার বাদী হয়ে ঢাকা হাইকোর্টে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন জানিয়ে ২ জনকে বিবাদী করে একটি মামলা করেন। 

কেঁচো খুড়তেই বেরিয়ে আসে সাপ। এ যেন দুর্নীতির আঁতুরঘর। ২০২১ সালে করোনার জন্য এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সব বোর্ডের ফরম পূরণের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের টাকা ফেরত না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে জানান অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা। 

২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার জন্য বেশ কয়েক শিক্ষার্থীও কাছ থেকে ফরম পূরণের জন্য ৩ থেকে ৪ হাজার করে টাকা নিয়েও তাদের ফরম পূরণ করেনি প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে সরকার ঘোষিত উপবৃত্তি জন্য শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২০০ থেকে ৩০০ করে টাকা উত্তোলন করেন।

অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা বলেন, প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে স্কুলে দুর্নীতি করে আসছে। ফরম পূরণের অতিরিক্ত টাকা নেওয়া, ২০২১ সালের করোনাকালীন ফরম পূরণের টাকা ফেরত না দেওয়া, উপবৃত্তির জন্য অতিরিক্ত টাকা নেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছে। নাইট গার্ড দিয়ে ক্লাস নেওয়া হয় বলে জানান ছাত্রছাত্রীরা।

ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত সদস্য মো. বাবুল আক্তার ও মো. সাজ্জত হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্নীতি করে আসছে। আমরা প্রতিবাদ করি বলে কোনো মিটিং এ আমাদের ডাকা হয় না। তাদের সকল দুর্নীতির প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে বলেও তারা জানান। তারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির অপসারণ দাবি করেন। 

প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, কোনো অনিয়ম করা হয়নি। আমার ছেলে পরীক্ষায় পাস করেছে নিয়ম অনুযায়ী চাকরি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন ২০২১ সালের ফরম পূরণের টাকা উত্তোলন করা হয়নি।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রঞ্জু আহামেদ বলেন, আমার বোন খালেদা ও ভাগ্নির জামাতা মো. মাহাবুর হোসেন তাদের মেধায় চাকরি পেয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম করা হয়নি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহীনুর ইসলাম বলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়নি। যদি প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয় সেটা অপরাধ। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। যদি প্রমাণ হয় তাহলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ইত্তেফাক/পিও