সরকারি সম্পত্তি ব্যক্তি নামে বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় মেডিকেলের স্ট্রেচারে এসে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন খাদেম।
মঙ্গলবার (১৬ মে) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ মেডিকেলের স্ট্রেচারে এসে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন হুমায়ুন খাদেম।
এরপর জামিন চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবী শফিকুল ইসলাম।
দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর রফিকুল ইসলাম জুয়েল জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক ইকবাল হোসেন আগামী ধার্য তারিখ (৪ জুন) পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করেন। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী সোহানুর রহমান জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তার পক্ষে জামিন শুনানি করেন শফিকুল ইসলাম। দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর রফিকুল ইসলাম জুয়েল জামিনের বিরোধিতা করেন।
জামিন শুনানিতে আইনজীবী বলেন, এমন কোনো অসুখ নেই- যা অশীতিপর হুমায়ুন খাদেমের শরীরে বাসা বাঁধেনি। জামিনের নিয়ম অনুযায়ী বিশেষভাবে তিনি আদালতের অনুকম্পা পাবেন।
রাজধানীর গুলশান এলাকার ৪৮ দশমিক ৬০ শতাংশ সরকারি জমি ব্যক্তির নামে বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগে ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি হুমায়ুন খাদেমসহ আট জনের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক সেলিনা আখতার।
অন্য আসামিরা হলেন- রাজউকের সাবেক পরিচালক আব্দুর রহমান ভূঞা (এ আর ভুঞা), প্লট বরাদ্দ পাওয়া আমির হোসেন দেওয়ান, এ কে এম সহিউজ্জামান, সহিউজ্জামানের স্ত্রী কামরুন নেছা, মো. মোশাররফ হোসেন, মো. জাকারিয়া চৌধুরী ও মশিয়ার রহমান।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গুলশান মডেল টাউনের ৮৩ নম্বর রোডে ৪৮ দশমিক ৬০ শতাংশের প্লটটির (৬ নম্বর এনইজি প্লট) মালিক ছিল প্রিন্স করিম আগা খানের মালিকানাধীন পিপলস জুট মিল। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে সম্পত্তিটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হওয়ায় এর মালিক হয় সরকার।
এরপর ১৯৯২ সালে এখানে নতুন চারটি প্লট করা হয় যেগুলোর হোল্ডিং নম্বর হচ্ছে- ২৮, ২৮(এ), ২৮(বি) ও ২৮(সি)। প্লটগুলো অবৈধভাবে আমির হোসেন দেওয়ান, মোশাররফ হোসেন, জাকারিয়া চৌধুরী ও মশিউর রহমানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে জাকারিয়া চৌধুরী ও মশিউর রহমান প্লটের দখলে রয়েছেন। অন্য দুটি প্লট হাতবদল হয়েছে।
রাজউকের ওই দুই কর্মকর্তা ক্ষমতা অপব্যবহার করে সরকারি পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যক্তির নামে বরাদ্দ দিয়েছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই জমি বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষমতা রাজউকের ছিল না, তাই তারা তথ্য গোপন করে বরাদ্দ দেন। পরে সেখানে গুলশান মডেল টাউনের অধীনে ইমারত নির্মাণ করা হয়।
অবৈধ বরাদ্দ ও দখলে রেখে ইমারত নির্মাণের দায়ে দণ্ডবিধির ৪০৯, ১০৯ ও ৪২০ ধারা এবং ১৯৮৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫)২) ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
মামলাটি তদন্ত করে ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন দুদক কর্মকর্তা সেলিনা আখতার। ওই বছরের ১০ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত। হুমায়ুন খাদেম ও আমির হোসেন দেওয়ান পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।