বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন-এর উদ্যোগে বুধবার (১৭ মে) প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও কর্মচারী নেতৃবৃন্দের শপথ ও অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফিকামলি তত্ত্বের জনক, বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা ড. আব্দুল ওয়াদুদ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের নবনির্বাচিত ১১৩ সদস্যকে প্রধান অতিথি শপথ বাক্য পাঠ করান। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাসে দ্বিতীয় রেনেসাঁ। শেখ হাসিনার কারণেই দেশে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি, ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার দুরর্দশী নেতৃত্ব ও কূটনৈতিক সাফল্যে আজ আমরা জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি।
৪৩ বছর আগে দেশে ফিরে জননেত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে আপোষহীন লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন, এখনো করছেন। আপনজন চিরতরে হারিয়ে গেছে, পথে আঁধার আছে- সব ভয় সংশয় ভুলে মৃত্যু-ঝুঁকি নিয়ে দেশে এসেছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর টানা কয়েক বছর জাতি হতাশায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিল। জাতির আশা আকাঙ্ক্ষা যখন ভস্মীভূত, তখন সেখান থেকে ফিনিক্স পাখির মত শেখ হাসিনা বাংলার বুকে নব রেনেসার সূত্রপাত করেন।
সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে জননেত্রী শেখ হাসিনা মাতৃভূমিতে ফেরার দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য ছিল নব প্রেরণার উৎস। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, জাতীয় ৪ নেতা হত্যার বিচার, স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতির সুকঠিন দায়িত্বভার গ্রহণ করে তিনি দূরদর্শী নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বেই বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন রচিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এখন আর স্বপ্ন নয় বাস্তব। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে বিশ্ববাসী। পঁচাত্তর পরবর্তী জাতির ক্রান্তিলগ্নে বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশে স্বজন হারিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে 'একলা চলো নীতি' সূচনা করেছিলেন তা সত্যিই ছিল ইস্পাত কঠিন।
জননেত্রী শেখ হাসিনা সুবিস্তৃত রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রায় অর্ধশতাব্দীব্যাপী বাতিঘর হয়ে স্বমহিমায় প্রজ্বলিত, সেই সৌকর্য সহ তাকে অবলোকন, বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করা অপরিহার্য।
ড. আবদুল ওয়াদুদ আরও বলেন, তিনি মানুষের সামগ্রিক উত্তরণের আকাঙ্ক্ষার চিত্রনাট্যের রূপকার। ১৯৮১ থেকে ২০২৩- এই সুদীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পারিক্রমায়, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গণমানুষ তথা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছের মানুষে পরিণত হয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রতীক হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনা জনগণের কাছে আজ নন্দিত। তার প্রত্যাবর্তন আজও শেষ হয়নি। শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে প্রতীক্ষিত সীমান্ত চুক্তি, সমুদ্রসীমা জয়, বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে পদ্মাসেতু নির্মাণ, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান, তার সাফল্যের প্রসাধিত প্রভা।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, মেট্রোরেল, পায়রা সমুদ্র বন্দর, কর্ণফুলী টানেল, পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রভৃতি তার সাফল্যের মুকুটকে করেছে আরও সমৃদ্ধ ও সুষমামণ্ডিত।
সর্বোপরি, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচার, জাতীয় ৪ নেতা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর শেখ হাসিনাকে ইতিহাসের মনিকোঠায় গৌরবমন্ডিত আসনে অলংকৃত করেছে।
শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার এবং আদর্শের সুযোগ্য অনুসারী। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ গোটা বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। তার গতিশীল নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে। ৪৩ বছর পূর্বে দেশে ফিরে এমন বাংলাদেশের স্বপ্নের মশাল প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন শেখ হাসিনা, যেখানে স্বাধীনতা এখন ভয় শূন্য, জ্ঞান আছে মুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি, ভোট ও ভাতের অধিকার সুপ্রতিষ্টিত। বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি নয়- একথা আজ প্রমাণিত।
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ধারাবাহিকতাতে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন হয়, বিএনপি জামায়াতের মুখোশ উন্মোচিত হয় এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রূদ্ধদ্বার হয় উন্মোচিত। আজ নানা চড়াই-উৎড়াই ও ষড়যন্ত্রের কন্টকাকীর্ণ বন্ধুর পথ অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে স্বমহিমায় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো অমিত সম্ভাবনার উদীয়মান এক অর্থনীতি। বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সবচেয়ে বড় সার্থকতা এখানেই। তার প্রতিশ্রুতি পালন এবং অভীষ্ঠ লক্ষ্য অর্জনে তিনি সর্বদা নিবেদিতপ্রাণ। শেখ হাসিনার অন্তর্লোকে সর্বদাই ধ্বনিত হয় এক নৈর্ব্যক্তিক আর্তনাদ, কান পাতলেই শোনা যায় বাঙালির জন্য তীব্র নীরব অশ্রুপাতধ্বনি। পার্থিব নিরাসক্তিতে তিনি অনায়াসে প্রবেশ করেন, সাধারণ মানুষের মনোলোকে এবং সেখান থেকে তুলে আনেন মানুষের অকহনীয় যন্ত্রণাপাথর। এই নৈর্ব্যক্তিকতা এবং সপ্রাণ সারল্যই তাকে কালোত্তীর্ণ মহিমায় মহিমান্বিত করেছে গণমানুষের শ্রদ্ধার সৌধে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামীলীগ নেতা ইফতেখায়রোল আলম হিরক, বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি মো. ওয়ারেছ আলী ও সাধারণ সম্পাদক খায়ের আহমেদ মজুমদার।
আলোচনা শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধ, ১৫ আগাষ্ট নিহত সকল শহীদ, জাতীয় চার নেতা, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক সভাপতি মরহুম এস এ মালেক, শহীদ সেলিম, দেলয়ার সহ গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে নিহত সকল শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। বিশেষভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী পক্ষে ব্যাপক জনমত গড়তে ড. আবদুল ওয়াদুদ সম্পাদিত বর্তমান সরকারের উন্নয়নের বার্তা সম্বলিত বুকলেট সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। সরকারি কর্মচারীরা আসন্ন বাজেটে তাদের বেতন বৃদ্ধি সহ বৈষম্য দূরীকরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানান। অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক সরকারি কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।