ঈশ্বরদীতে চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যেই পুড়ে গেছে জয়নগর গ্রিডের একটি পাওয়ার ট্রান্সফরমার। যে কারণে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। দিনে এবং রাতে তিন-চার ঘণ্টা পর পর নিয়মিত বিরতিতে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। তবে অনেক এলাকায় ৩০ মিনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। এর সঙ্গে রয়েছে স্ক্যাডা সিস্টেমের লোডশেডিং। গরমের প্রচণ্ডতার মধ্যে বিদ্যুৎ না পেয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাধারণ জনজীবন। ব্যাহত হচ্ছে সেচকাজ।
পিজিসিবির ঊর্ধ্বতনরা বলছেন, পাওয়ার ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়ার কারণে নয়, দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে যাওয়ায় অন্যান্য স্থানেও একইভাবে লোডশেডিং হচ্ছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, দেশের অন্যান্য স্থানে যে লোডশেডিং হচ্ছে, তা ঈশ্বরদীর মতো দফায় দফায় নয়।
পিজিসিবি সূত্র জানায়, জয়নগর গ্রিডে ঈশ্বরদীর বিদ্যুতের চাহিদা ৮০ মেগাওয়াট। চাহিদা পূরণের জন্য ৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুইটি পাওয়ার ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে থাকে। প্রতিটি ৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও বাস্তবে একেকটির সক্ষমতা প্রায় ৫০-৬৫ মেগাওয়াটে ওঠানামা করে। চলতি মাসের প্রথম দিকে একটি অক্সিলারি ট্রান্সফরমারের ভেতরে সাপ ঢুকে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর পরই গত ৭ই মে পাওয়ার ট্রান্সফরমারটি পুড়ে যায়। বর্তমানে একটি পাওয়ার ট্রান্সফরমার টিকে আছে, যার সাহায্যে প্রতিদিন মাত্র ৪০-৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, নেসকোর অধীনে শুধু ঈশ্বরদীতে বিদ্যুতের চাহিদা ৩৭ মেগাওয়াট হলেও বাস্তবে জেনারেশন অনেক কম। রূপপুর পারমাণবিকের আবাসন ‘গ্রীণসিটি’ ও ইপিজেডকে লোডশেডিংয়ের আওতামুক্ত রেখে ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। শহরের অধিক গুরুত্বপূর্ণ পাতিলাখালী সাব-স্টেশনে বিদ্যুতের চাহিদা ৮ মেগাওয়াট, স্কুলপাড়ায় ৬ মেগাওয়াট এবং জয়নগর সাব-স্টেশনের চাহিদা ১২-১৩ মেগাওয়াট। অধিক জনগুরুত্বপূর্ণ পাতিলাখালী সাব-স্টেশনকে স্ক্যাডা সিস্টেমের আওতায় আনা হয়েছে। সিস্টেমটি জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত থাকায় অটোমেশন পদ্ধতিতে দিনে-রাতে দফায় দফায় বন্ধ হচ্ছে। পাশাপাশি ট্রান্সফরমার বিকলের কারণেও লোডশেডিং করা হচ্ছে। পাতিলাখালী সাব-স্টেশনের আওতাধীন এলাকায় ঈশ্বরদী বাজারসহ বিপুলসংখ্যক রাশিয়ান ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে। ঈশ্বরদীর জন্য আরও পাঁচ-ছয় মেগাওয়াট লোড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাতিলাখালী সাব-স্টেশনকে স্ক্যাডার আওতামুক্ত এবং অকেজো পাওয়ার ট্রান্সফরমার সরিয়ে নতুন সংস্থাপন করা জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।
পিজিসিবির জয়নগর এইচভিডিসি সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৭ মে পুড়ে যাওয়া পাওয়ার ট্রান্সফরমার রিপ্লেসমেন্টের জন্য ১৪ মে অনলাইনে টেন্ডার প্রকাশ হয়েছে। সাভার থেকে এটি আনা হচ্ছে। পরিবহন, সংস্থাপন ও কমিশনিং করতে আরও ১৫-২০ দিন সময় লাগতে পারে। ৭৫ মেগাওয়াটের যে পাওয়ার ট্রান্সফরমার চালু রয়েছে, এটির বাস্তবে সক্ষমতা ৬০-৬৫ মেগাওয়াট। একটি ট্রান্সফরমার দিয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি।’ আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করি না ট্রান্সমিশন করি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পাওয়ার ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়ার কারণে নয়, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাময়িক ঘাটতির কারণে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে।
নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুন নূরের সঙ্গে লোডশেডিং প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজশাহীর মানবসম্পদ বিভাগের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারব না।’ ঈশ্বরদী শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি শাফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, একে তো প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে বেচাকেনায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে দোকানদাররা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করবে।