ঢাকার বাইরে ফুটবল লিগ খেলা হলে আকর্ষণ বাড়বে। যারা রাজধানীর বাইরে অবস্থান করেন তারা দেশের বড় ক্লাবের খেলা দেখার সুযোগ পান না। ঢাকার বাইরে খেলা হলে দর্শক খুশি হতেন। ঢাকার ক্লাবগুলোর ফুটবলারদের নৈপুণ্য দেখার সুযোগ পেতেন। এসব কথা অনেক বার উচ্চারণ হয়েছে। এবারই প্রথম দেশের ফুটবলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলা প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ এবার প্রায় পুরোটাই ঢাকার বাইরে হয়ে গেল। কিন্তু স্টেডিয়ামে কত জন দর্শক হয়েছে তা কি কেউ বলতে পারবে। গ্যালারি উপচে পড়েনি দর্শক। ডেকে ডেকে টিকিট বিক্রি করতে হয়েছে। হাতে গোনা দর্শক মাঠে আসতে চায়নি। আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিত দাস রূপু জানালেন, কোনো খেলায় কিছু হয়েছে আবার কোনো খেলায় দর্শকই হয়নি।’ রাজশাহী, গোপালগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, ঢাকায় বসুন্ধরা কিংসের মাঠে লিগের খেলা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সংস্কার করতে গিয়ে লিগের সব খেলাই চলে গেল ঢাকার বাইরে। মাঠসংকটে ঢাকায় লিগ আয়োজন করা যায়নি। লিগ বন্ধ রাখা হলে ফুটবলারদের ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যেত। খেলোয়াড়দের কথা ভাবনায় রেখে ক্লাবগুলোকে রাজধানীর বাইরে পাঠানো হলো। ক্লাবগুলোকে গুনতে হলো অতিরিক্ত অর্থ। মোহামেডান-আবাহনীর কাছে হিসাব আছে তারা নির্ধারিত বাজেটের বাইরে অর্থ খরচ করেছে। রূপু বলছিলেন, ‘ঢাকায় আমাদের ভেন্যু ছিল। এখন বাইরে খেলতে গিয়ে বাজেট ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গড়ে ম্যাচ দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।’ একই সমস্যার কথা জানিয়েছেন মোহামেডানের ফুটবল ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকিব। তিনিও বললেন, ‘২-৩ লাখ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে প্রতি ম্যাচে। অর্ধেক খেলা ঢাকার বাইরে হলে বাকি অর্ধেক খেলা ঢাকায় হতো। তাতে খরচও কমে যেত।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো ক্লাবেরই যদি এভাবে অর্থ খরচ করতে হয় তাহলে যে সব ক্লাব আমাদের চেয়ে বেশি সংকটে ভুগছে তারা কী করবে।’
সত্যজিত দাস রূপুর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল দর্শক আসে কিনা। তিনি বললেন, ‘দর্শক যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে না আসে তাহলে আপনি কী করবেন।’ অতিরিক্ত অর্থ খরচই নয়, রূপুর কণ্ঠে আরো সমস্যার কথা শোনা গেল। ক্লাবে থাকলে খেলোয়াড়দের খাওয়ার বিষয়ে পছন্দ-অপছন্দ রাখা যায়। আর ঢাকার বাইরে গেলে বাবুর্চি নেওয়া যায় না। হোটেলে যা থাকে তাই খেতে হয়।’
যত রকম সংকটই হোক। ক্লাব কর্মকর্তারা কতটা কষ্টে ক্লাব চালাচ্ছেন সেটা তারাই বুঝতে পারছেন। কোনো সংকট ফুটবলারদের স্পর্শ করছে না। তারা তাদের পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। দুই একটা ছোটখাটো সমস্যা ছাড়া বাদবাকি প্রায় সব ফুটবলারই সুখে আছেন। মোহামেডান, আবাহনী, বসুন্ধরা, শেখ রাসেল, শেখ জামাল, ফর্টিস এফসি, পুলিশ এফসি-সহ প্রায় সব ক্লাবেই ফুটবলার ভালো অবস্থায় রয়েছেন। তারা অনুশীলন করছেন। ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন। পারিশ্রমিক নিয়ে যাচ্ছেন। দেশের ফুটবলের উন্নতি কতটা হচ্ছে, না হচ্ছে তা নিয়ে দুর্ভাবনা নেই। মৌসুম এখন শেষের পথে, এরই মধ্যে নতুন মৌসুমের জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আলোচনাও শুরু হয়েছে। একাধিক ক্লাব আগামী মৌসুমের জন্য খেলোয়াড় তালিকা করে ফেলেছে। ক্লাব কর্মকর্তারা বলছেন, ফুটবলারদের টাকা জোগাড় করতে হয় না। পারিশ্রমিক চেয়ে বসে থাকেন। ৮ লাখ টাকার ফুটবলার ২৮ লাখ। এক ক্লাব ১৫ লাখ দিয়ে নিচ্ছে না, অন্য ক্লাব ৩০ লাখে নিচ্ছে। একাধিক ফুটবলার চলতি মৌসুমে ৭৫ লাখ টাকা পেয়েছেন। এবার আরো বেশি পারিশ্রমিক চাইছেন একাধিক ফুটবলার। পারফরম্যান্স চোখে পড়েনি, দেশকে সাফল্য দিতে পারেননি। মাঠের পারফরম্যান্স যেমনই হোক সুখেই আছেন ফুটবলাররা।
গত ১০ বছরে ফুটবলারদের আর্থিক উন্নতি হয়েছে, গাড়ি কিনেছেন, জমি কিনেছেন, পরিবারের কাছে আস্থা অর্জন করেছেন খেলোয়াড়রা। নিয়মিত লিগ হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সন্তানরা দেশের ক্লাবে খেলতে চায়।