শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

বাংলাদেশে বিনিয়োগের আরো উন্নত পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র

আপডেট : ২২ মে ২০২৩, ০০:৩৫

বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আরো উন্নত পরিবেশ চায় বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

গতকাল রবিবার ইউনাইটেড স্টেট ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ব্রেনডেন লিঞ্চের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠককালে তারা এ কথা জানান। এ সময় বাণিজ্য, কৃষি, শ্রম ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্যসচিব বলেন, বৈঠকে আমরা তাদের বলেছি, বিনিয়োগের পরিবেশটা উন্নত করার বিষয়টি একটি চলমান প্রক্রিয়া, আমরা চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই অনেকক্ষেত্রে প্রতি বছর যে লাইসেন্স নবায়ন করতে হতো এগুলো আমরা সহজীকরণ করেছি। পাঁচ বছর পর্যন্ত নবায়ন করা যায়। আমরা ব্যবসার পরিবেশ এবং প্রক্রিয়া সহজীকরণে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। তারা বলছে এটি হলে তাদের বিনিয়োগ বাড়বে।

বাণিজ্যসচিব বলেন, তারা অভিযোগ করেছে কিছু কিছু আইপিআর (ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি রাইটস) ভায়োলেশন করে কিছু প্রোডাক্ট এক্সপোর্ট হয়েছে। আমরা জোরালোভাবে বলেছি, যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের কোনো পণ্য রপ্তানির সুযোগই নেই। কারণ, রপ্তানির সময় পণ্য নিয়ে মানসম্পন্ন পরীক্ষা হয়, নিরীক্ষা হয়। বাণিজ্যসচিব বলেন, অন্য কোনো দেশের কোনো কোম্পানি যদি তাদের ওয়েবসাইটে কোনো পণ্যকে বাংলাদেশি পণ্য হিসেবে দেখায়, সেই দায়িত্ব তো আমরা নিতে পারি না। তারপরও যদি তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) কাছে কোনো অভিযোগ থাকে। তাহলে সেটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানালে আমরা ব্যবস্থা নেবে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড পণ্যের একটি সংগঠন ও ফ্রান্সের একটি শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নকল পণ্য রপ্তানির অভিযোগ তুলে গত ৩০ ও ২৬ জানুয়ারিতে ইউএসটিআরের কাছে আলাদা দুটি আবেদন জমা দেয়। তাদের অভিযোগ ছিল, বাংলাদেশের কিছু কারখানা বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক ও জুতা নকল করে থাকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শুধু বাংলাদেশই নয়; ভিয়েতনাম, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ (ইউএই) আরো কয়েকটি দেশের বিরুদ্ধেও নকল পণ্য উত্পাদন ও রপ্তানির অভিযোগে একই ধরনের পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি চিঠি পাঠিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মতামত জানতে চায়। বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও উইং যথাসময়েই ইউএসটিআরকে প্রাথমিক মতামত জানায়। এতে প্রমাণ ছাড়া অভিযোগকে ‘অন্যায্য ও ক্ষতিকর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং নকল পণ্য উত্পাদন প্রতিরোধে বাংলাদেশে অন্তত ১০টি আইন রয়েছে বলে জানিয়ে দিয়েছে।

গতকাল বৈঠকে গত ৬ ও ৭ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে যে টিফফা বৈঠক হয়েছিল সে বিষয়গুলোর ফলোআপ আলোচনা হয়েছে বলেও বাণিজ্য সচিব জানান।

‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাঁচা তুলা আমদানিতে ফিউমিগেশন করতে হবে না’

 যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাঁচা তুলা আমদানির ক্ষেত্রে দেশে আর পোকামাকড় মুক্তকরণ বা ফিউমিগেশন করতে হবে না বলে জানিয়েছেন কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার। গতকাল রবিবার সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও দূতাবাসের  প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠক শেষে কৃষিসচিব এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এতদিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির ক্ষেত্রে দেশে পৌঁছানোর পর পোকামাকড়মুক্ত করে, বন্দর থেকে খালাসের ছাড়পত্র নিতে হতো। যুক্তরাষ্ট্র তুলা রপ্তানির আগে সেদেশে পোকামাকড়মুক্ত করে। সেটি দেশেও আরেকবার ফিউমিগেশন করা হতো। সেজন্য, দুবার পরীক্ষা বা ডাবল ফিউমেগেশন বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ব্যবসায়ীরা অনেকদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ অবস্থায়, বাংলাদেশ থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর করে কাঁচা তুলা পোকামাকড়মুক্ত করার পদ্ধতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

কৃষিসচিবের সাথে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও দূতাবাসের ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদলে বাণিজ্য প্রতিনিধি ডেপুটি এসিসট্যান্ট ব্রেন্ডন লিঞ্চ, সাউথ এশিয়ার ডিরেক্টর মেহনাজ খান, রিজিওনাল আইপি অ্যাটাশে জন কাবেকা, ঢাকার ইউএস দূতাবাসের ইকনমিক চিফ জোসেফ গিবলিন, এগ্রিকালচার অ্যাটাশে মেগান ফ্রান্সিস, লেবার অ্যাটাশে লিনা খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার কাঁচা তুলায় ক্ষতিকর ‘কটন উইভিল’ পোকা থাকায় সেসব দেশ থেকে কাঁচা তুলা আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে পৌঁছার পর পোকামাকড়মুক্ত বা ফিউমিগেশন করার বাধ্যবাধকতা ছিল। ইউরোপ, আফ্রিকাসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে এই বাধ্যবাধকতা নেই। এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাঁচা তুলা আমদানির ক্ষেত্রেও এটি প্রয়োজন হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট বা রোগজীবাণুমুক্ত সনদপত্র থাকলেই চলবে। তবে, উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশের তুলার ক্ষেত্রে আগের মতোই ফিউমিগেশন করার বাধ্যবাধকতা বহাল রয়েছে। এছাড়া, একই কন্টেইনারে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশের তুলা শিপমেন্ট হলে, যুক্তরাষ্ট্রের তুলাকেও বাধ্যতামূলক ফিউমিগেশন করতে হবে। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, দেশে বছরে তুলার চাহিদা ৮৫ লাখ বেল। দেশে উত্পাদন হয় প্রায় ২ লাখ বেল। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বছরে সাড়ে ৭ লাখ বেল তুলা আমদানি হয়।

 

ইত্তেফাক/ইআ