বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

২৯তম গ্যাসক্ষেত্র ইলিশা

  • মজুত ২০ হাজার কোটি ঘনফুট
  • দৈনিক গড়ে ২ কোটি ঘনফুট ২৬ বছর ধরে উত্তোলন করা যাবে
আপডেট : ২৩ মে ২০২৩, ০১:০৫

দ্বীপজেলা ভোলায় আরেকটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস অনুসন্ধান সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। জেলা সদরের ইলিশা ইউনিয়নে আবিষ্কৃত এ খনিকে দেশের ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র হিসাবে ঘোষণা করল সরকার। শাহবাজপুর ও ভোলা নর্থের পর ভোলায় এটি তৃতীয় গ্যাসক্ষেত্র। দেশে তীব্র জ্বালানি সংকটের মধ্যে এই ‘ইলিশা গ্যাসক্ষেত্র’ দেশীয় অর্থনীতি ও বাণিজ্যের জন্য স্বস্তির খবর বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

গতকাল সোমবার রাজধানীর বারিধারায় নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের ২৯তম গ্যাসক্ষেত্র হিসাবে ইলিশার নাম ঘোষণা করেন বিদ্যুত্, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি জানান, ইলিশা-১ অনুসন্ধান কূপ খননের মাধ্যমে এ গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। নতুন গ্যাসক্ষেত্রটিতে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট (২০ হাজার কোটি ঘনফুট) গ্যাস মজুত রয়েছে। দেশে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের খুচরা দর অনুযায়ী এই পরিমাণ গ্যাসের বাজারমূল্য ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর যদি দীর্ঘমেয়াদে আমদানি করা এলএনজির দর বিবেচনা করা হয়, তাহলে এর মূল্য দাঁড়াবে ২৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

নসরুল হামিদ বলেন, এটা খুবই আনন্দের সংবাদ, সৌভাগ্যের বিষয়। ভোলায় সব মিলিয়ে প্রায় তিন টিসিএফ গ্যাস মজুত আশা করা হচ্ছে। নদীর ঠিক ওপরের দিকে নতুন গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কার করা হয়েছে। ২৬ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত এখান থেকে গ্যাস পাওয়া যাবে।

বাপেক্স সূত্র জানায়, শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে ইলিশার দূরত্ব ৩৫-৩৮ কিলোমিটার। আর ভোলা নর্থ থেকে এটি ৬ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। গত ৯ মার্চ ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের মালের হাটসংলগ্ন এলাকায় ইলিশা-১ কূপটির খননকাজ শুরু হয়ে ১৪ এপ্রিল ৩ হাজার ৪৭৫ মিটার গভীরতায় খনন সম্পন্ন হয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গাজপ্রম বাপেক্সের হয়ে কূপটি খনন করে। ২০ এপ্রিল এর পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়ে ১৬ মে শেষ হয়। কূপটির তিনটি স্তরে তিনটি পৃথক ড্রিল স্টিম টেস্টের (ডিএসটি) মধ্যে সর্বশেষ তৃতীয় টেস্ট গত ১৫ মে সম্পন্ন হয়। এই পরীক্ষায় কূপের ৩ হাজার ২৫০ থেকে ৩ হাজার ২৫৪ মিটার গভীরতায় ২ কোটি ঘনফুট গ্যাস ফ্লো পাওয়া যায়।

ভোলায় আগে দুটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। ইলিশা নিয়ে এখন গ্যাসক্ষেত্রের সংখ্যা দাঁড়াল তিনে। শাহবাজপুর, ভোলা নর্থ ও ইলিশা— ভোলার এই তিনটি গ্যাসক্ষেত্রে এখন ২ দশমিক ২৩ ট্রিলিয়ন (২ লাখ ২৩ হাজার কোটি) ঘনফুট গ্যাস মজুত রয়েছে। এগুলো থেকে দৈনিক ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। এই তিনটি গ্যাসক্ষেত্রের ৯টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। এগুলো হলো—বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহাবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের ছয়টি কূপ, সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ভোলা নর্থের দুটি ও সর্বশেষ ইলিশা ক্ষেত্রের ইলিশা-১ কূপ।

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, সিলেটের পর ভোলাই একমাত্র জেলা যেখানে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। ভোলা থেকে প্রায় ২৬ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি। সেখানে আমাদের একটি প্রসেস প্ল্যান্ট রয়েছে। আরো একটি আনার কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ভোলার গ্যাস পাইপলাইনে দেওয়া সম্ভব হবে। ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা যাবে একটি পাইপলাইন। এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। এছাড়া সিএনজি আকারে গ্যাস এনে তিতাস গ্যাস কোম্পানির এলাকার শিল্পকারখানাগুলোতে সরবরাহ করা হবে।

ইত্তেফাক/এসটিএম