বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

দারুসসালামের ভিডিও ভাইরাল

স্কুলছাত্রকে ধরে নিয়ে প্রকাশ্যে খুন করল কিশোর গ্যাং

আপডেট : ২৩ মে ২০২৩, ০৫:৫৯

রাজধানীর মিরপুরের দারুসসালামে সিয়াম (১৪) নামে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা করেছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ ঘটনায় জড়িতরা চিহ্নিত হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বরং মামলা রেকর্ডে গড়িমসির অভিযোগ রয়েছে। আবার মামলা হলেও বাদ পড়েছে চিহ্নিত অনেকের নাম। গত রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মিরপুরের দারুসসালামের লালকুঠির বসুপাড়া এলাকায় এই খুনের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, প্রকাশ্যে সিয়ামকে গলা ধরে টেনে নিয়ে হত্যা করে কিশোর গ্যাংয়ের ২০/২৫ জন সদস্য। সিয়ামকে ধরে নেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে। পুলিশ বলছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে, কী কারণে সিয়ামকে হত্যা করা হলো সে বিষয়ে মুখ খুলছে না কেউ।   

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় রাজনীতিতে যুক্ত না হওয়ায় খুন করা হয়েছে কিশোর সিয়ামকে। একই কারণে গত ৪ মে বিকেলে দারুসসালামের বাগবাড়ী এলাকায় কবিরুল ইসলাম অপু নামে এক ব্যবসায়ীকে তার মায়ের সামনে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা করা হয়। অপুর ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় গত ৫ মে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে দারুসসালাম থানায় মামলাও দায়ের করা হয়। নিহত সিয়ামের মা স্বপ্না বেগম বলেন, লালকুঠি এলাকার কবি নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সিয়াম। কয়েক মাস আগে ঢাকায় আসায় সিয়াম এখানকার পরিবেশ সম্পর্কে তেমন কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি। এরই মধ্যে কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসীরা সিয়ামকে মেরে ফেলল। এ ঘটনায় জড়িত আসামিদের সর্বোচ্চ বিচার চাই।

ঘটনার সময় সিয়ামের সঙ্গে থাকা তার বন্ধু শীতল হোসেন বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আমরা ১০-১৫ জন বন্ধু একসঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। রাত সাড়ে ৮টার দিকে হঠাত্ ঝোড়ো হাওয়া শুরু হলে বসুপাড়ায় আমাদের পরিচিত একটি আমগাছ থেকে আম পড়েছে ভেবে গাছটির কাছে যাই আমি, সিয়াম ও আসিফ। ঝড়ে কোনো আম না পড়ায়, আমরা নিজেরাই আম পাড়ার চেষ্টা করি। এ সময়ে লাইটের আলোতে আমরা দেখতে পাই দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ২০-২৫ জন আমাদের দিকেই তেড়ে আসছে। তাদের মধ্যে রকি, ফরিদ, রুবেল ওরফে পটেটো রুবেল, ইমরান ও জার্মানি মাসুদকে দেখে আতঙ্কে দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাই। এ সময় সিয়াম দৌড়ে পিছিয়ে পড়লে ঐ সন্ত্রাসী গ্রুপ ওকে ধরে ফেলে। পরে জানতে পারি সিয়ামের পেটে ছুরিকাঘাত করে মারাত্মক আহত করে পালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় সিয়ামকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত সিয়ামের মা বলেন, বিনা কারণে ওরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। কারা জড়িত, এ বিষয়ে বলতে চাই না। তবে, পুলিশ প্রথমে ঐ প্রভাবশালী গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা নিতে চায়নি। অনেক গড়িমসির পর আট জনের নাম উল্লেখ করে মামলা নিয়েছে। আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে দারুসসালাম থানার ওসি আমিনুল বাশার বলেন, এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/ইআ