কুড়িগ্রামের চিলমারীতে পল্লি বিদ্যুৎ দপ্তরের গাফিলতির কারণে প্রায় দেড় শতাধিক গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নে ৩৯ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণের পর ২৭ কিলোমিটার এলাকায় সংযোগ দেওয়া হলেও পরিদর্শককে উৎকোচ না দেওয়ায় বাকি ১২ কিলোমিটার এলাকায় সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুন মাসে চিলমারীকে শতভাগ বিদ্যুতায়নকৃত উপজেলা হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণার পর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নকে বিদ্যুতের আওতায় নেওয়ার লক্ষ্যে ২০২১ সালে জোড়গাছ ঘাট এলাকা থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশ দিয়ে ৫ কিলোমিটার পথে ব্যয়বহুল সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হয়। ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন দুর্গম চরাঞ্চল চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতী, বৈলমন্দিয়ার খাতা, কড়াই বরিশাল, ঢুষমারা, গাজীরপাড়া, বিশার পাড়া, আমতলা, ছালিপাড়া, যুগ্নিদহ, মানুষমারা ও আঠারোপাখি গ্রামে ৩৯ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করে পল্লি বিদ্যুৎ। নির্মিত ৩৯ কিলোমিটার লাইনের মধ্যে ২৭ কিলোমিটার এলাকায় ২২০০ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। বিদ্যুতের এসটি তার টানানো, সার্ভিস তার লাগানো ও বাড়ি ওয়ারিং করা হলেও পরিদর্শককে ঘুষ না দেওয়ায় এখনো ১২ কিলোমিটার এলাকার মিটার সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ১৪০টি বাড়িতে বিদ্যুতের ওয়ারিং করা হয়েছে কিন্তু মিটার সংযোগ দেওয়া হয়নি। প্রায় ১ বছর আগে এসটি তার ও সার্ভিস তার প্রদান করা হয়েছে এবং বাড়িগুলো ওয়ারিং করে তাদের জন্য ৬টি ট্রান্সফরমার বরাদ্দ করে এলাকায় প্রদান করা হয়েছে। টাকা পয়সা খরচ করে এতসব কাজ করেও অজানা কারণে দীর্ঘদিনেও তাদের মিটার প্রদান করা হয়নি। বিদ্যুতের সংযোগ না দেওয়ায় কৃষি জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা।
নওশাদ আলী নামের এক খামারি বলেন, বিদ্যুতের লাইন নির্মাণ হওয়ায় গরুর প্রকল্প হাতে নিয়েছিলাম। সে মোতাবেক গরুও কিনেছি। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় অতিরিক্ত গরমে গরু অসুস্থ হয়ে যাওয়া এবং চুরি-ডাকাতির ভয়ে কমমূল্যে দুইটি গরু বিক্রি করে দিয়েছি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য কয়েক দফায় বর্তমান ডিজিএম এর কাছে গেলে তিনি পরিদর্শক লুৎফর রহমানকে প্রতিবেদন প্রদান করতে বলেন। ওয়ারিং পরিদর্শক লুৎফর রহমান এলাকা পরিদর্শনে এসে বিভিন্ন ত্রুটি বের করেন এবং তার সহযোগী সাহেব আলীর মাধ্যমে মিটার প্রতি ১হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিলে টাকা দিলে দুই দিনেই মিটার সংযোগ দেওয়া হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তারা স্থানীয় তাজুল ইসলাম ও হাসানকে তারা ১ থেকে দেড় হাজার টাকা করে দিয়েছেন। তবে ৬ মাসেও সংযোগ কিংবা টাকা কোনটিই পাচ্ছেন না।
তাজুল ইসলাম বলেন, সহজে বিদ্যুতের সংযোগ পেতে টাকা উত্তোলন করে তৎকালীন সহকারী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মোক্তারুলকে ১৬ হাজার টাকা দিয়েছি। তিনি বদলি হয়ে যাওয়ায় কাজ ও টাকা কোনটিই পাচ্ছি না।
তৎকালীন সহকারী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মোক্তারুল ইসলাম বলেন, আমি কোনো টাকা নেয়নি। আমি ওই এলাকার গ্রাহকের বিদ্যুৎ প্রদানের জন্য সহযোগিতা করেছি।
অভিযুক্ত পল্লী বিদ্যুৎ ওয়ারিং পরিদর্শক মো. লুৎফর রহমান বলেন, কারও কাছে টাকা চায়নি। ওই এলাকায় বাড়ি ওয়ারিংয়ের কথাও জানা নেই।
কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির চিলমারী জোনাল অফিসের ডিজিএম প্রকৌশলী মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ওই এলাকায় ওয়ারিং সম্পন্ন না হওয়ায় সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না।