শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবনের অনুমতি দেবে রাজউক

  • প্লটসংলগ্ন রাস্তার প্রশস্ততা লাগবে ১০০ ফুট
  • নীতিমালা না থাকায় অনেকে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক ভবন করেছে : রাজউক
  • এতে আবাসিক এলাকায় যানজট ও ভোগান্তি বাড়বে : নগর পরিকল্পনাবিদ
আপডেট : ২৬ মে ২০২৩, ০৩:১০

নির্দিষ্ট ফি ও শর্তসাপেক্ষে আবাসিক প্লট বা ভবনগুলোকে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ব্যবহারের অনুমতি দিতে যাচ্ছে রাজউক। প্রথমে রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে এ সুযোগ দেবে সংস্থাটি। সেক্ষেত্রে অভিজাত এলাকার ভবনমালিকদের গুনতে হবে কাঠাপ্রতি ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা। সঙ্গে মানতে হবে বেশ কয়েকটি শর্ত। নগরবিদরা বলছেন, এমন সুযোগে আবাসিক এলাকায় যানজট ও ভোগান্তি বাড়বে। অন্যদিকে রাজউক বলছে, নীতিমালা না থাকায় অনেকে বিভিন্ন সময় আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিকের আবেদন করেন। আবার আবাসিক এলাকায় অনেকে ইতিমধ্যে বাণিজ্যিক স্থাপনা করেছেন। সব দিক বিবেচনা করে তাদের নীতিমালার মধ্যে আনার জন্য এটি করা হচ্ছে। মাঝখানে অনুমোদন বন্ধ থাকলেও এটি এখন একটি নিয়মের মধ্যে আসবে। আর ১০০ ফুট প্রশস্ত সড়ক না থাকলে এই অনুমোদন পাবে না।

প্লটের শ্রেণি পরিবর্তনের সুযোগ দিয়ে গত ৩ মে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারি করা হয়। আবাসিক প্লট বাণিজ্যিক করতে ২১টি শর্ত পালন করতে হবে। গুলশান, বনানী, বারিধারার (জে ব্লক বাদে) আবাসিক প্লটকে বাণিজ্যিক প্লটে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কাঠাপ্রতি ১ কোটি টাকা ফি এবং বারিধারা জে ব্লক ও উত্তরা (১ম পর্ব ও ২য় পর্ব) আবাসিক এলাকায় কাঠাপ্রতি ৫০ লাখ টাকা ফি নির্ধারণ করেছে রাজউক।

তা ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য সুপারিশকৃত এলাকায় অবৈধভাবে বাণিজ্যিকরূপে ব্যবহূত প্লটগুলোর মালিকদের পরিপত্র জারির ছয় মাসের মধ্যে পরিপত্র অনুযায়ী বাণিজ্যিক প্লটে পরিবর্তনের আবেদন ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে রাজউক কর্তৃক সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে নির্ধারিত জরিমানাসহ পরিবর্তন ফি প্রদান করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্লটের ধরন পরিবর্তন করতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে রাজউক। সুপারিশকৃত রাস্তা/সড়ক ছাড়া অন্য কোনো রাস্তার পাশের প্লট রাজউকের অনুমোদন ব্যতীত বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহূত হলে রাজউক লিজ দলিলের শর্তানুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এদিকে উত্তরা (১ম ও ২য় পর্ব) আবাসিক এলাকায় বেশ কিছু এলাকা বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিমান উড্ডয়ন সংক্রান্ত উচ্চতা নিয়ন্ত্রিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত আছে। ফলে এসব এলাকায় উচ্চতার সীমা নির্ধারিত থাকার ফলে কিছু প্লটে স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেসব প্লটে পার্ক, খেলার মাঠ, কবরস্থান, জলাধার, সৌর বিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য সোলার পার্ক স্থাপন করা যাবে।

তা ছাড়া গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরা (১ম ও ২য় পর্ব) আবাসিক এলাকাগুলোর অভ্যন্তরে অবস্থিত পরিত্যক্ত সম্পত্তি তালিকাভুক্ত প্লটগুলোয় বিদ্যমান অবৈধ দখল উচ্ছেদপূর্বক আবাসিক ভবন/বহুতল ভবন এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সুবিধাদি যেমন স্কুল, কলেজ, পার্ক, গাড়ি পার্কিং, দুর্যোগকালীন সমাবেশ, সিনিয়র সিটিজেন কেয়ার, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র ইত্যাদি স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অন্যদিকে বারিধারা কে ব্লক ও গুলশান প্রকল্প এলাকার (নর্থ গুলশান অ্যাভিনিউ) কয়েকটি ব্লকে ডিপ্লোম্যাটিক জোন থাকায় উক্ত এলাকায় নিরাপত্তা সংস্থার নিরাপত্তা সংক্রান্ত অনাপত্তি গ্রহণ সাপেক্ষে নির্ধারিত রাস্তাসংলগ্ন প্লটকে বাণিজ্যিক প্লটে পরিবর্তনের অনুমোদন প্রদান করা যাবে।

১০০ ফুট রাস্তার দুই পার্শ্বের যে এলাকার প্লট বাণিজ্যিক প্লটে পরিবর্তনের অনুমোদন প্রদান করা হবে তা হলো—গুলশান আবাসিক এলাকার গুলশান অ্যাভিনিউ, বনানীস্থ কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, বারিধারা আবাসিক এলাকার প্রগতি সরণি এবং উত্তরা ১ম পর্ব ও ২য় পর্ব আবাসিক এলাকার জসীমউদ্দীন অ্যাভিনিউ, রবীন্দ্র সরণি, সোনারগাঁও জনপথ, গাউসুল আজম অ্যাভিনিউ, গরীবে নেওয়াজ অ্যাভিনিউ, শাহ মখদুম অ্যাভিনিউ, শাহজালাল অ্যাভিনিউ, ঈশা খাঁ অ্যাভিনিউ ও আলাওল অ্যাভিনিউ। এ ছাড়াও রাজউক আওতাধীন অন্যান্য এলাকার যেখানে রাস্তার প্রশস্ত ১০০ ফুট থাকবে সেখানেই বাণিজ্যিক করা যাবে। এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আবাসিক এলাকার ভবন বাণিজ্যিক ভবনের অনুমোদন দেওয়া হলে রাজধানীতে সমস্যা আরও বাড়বে। যারা আবাসিক এলাকায় প্লট ও ফ্ল্যাট কিনেছেন, তারা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে চেয়েছেন। এখন রাজউকের এমন সিদ্ধান্তের ফলে সেই পরিবেশ নষ্ট হবে।

ইত্তেফাক/এসটিএম