শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

দাবি পূরণ না হলে জুলাইয়ে শস্য চুক্তি সমাপ্তির হুমকি রাশিয়ার

আপডেট : ২৬ মে ২০২৩, ১৩:১২

রাশিয়ার শস্য ও সার রফতানিতে বাধা অপসারণে কোনো অগ্রগতি না হলে কৃষ্ণ সাগরের মাধ্যমে শস্য রফতানির বিষয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে গত বছর যে চুক্তি হয়েছিল তা ১৭ জুলাইয়ের পরে সমাপ্তি ঘটানো হবে। মস্কোর বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের জুলাইয়ে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় এই চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ সত্ত্বেও ইউক্রেনের খাদ্যশস্য কৃষ্ণ সাগরের বন্দর দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। মার্চ থেকেই দাবি না মানা হলে চুক্তি থেকে সরে আসার হুমকি দিয়ে আসছিল রাশিয়া।

গত বছরের জুলাইয়ে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় এই চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ সত্ত্বেও ইউক্রেনের খাদ্যশস্য কৃষ্ণ সাগরের বন্দর দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

তবে কিছুদিন আগে তারা আরও তিন মাসের জন্য চুক্তিটি পুনরায় অনুমোদন করেছে। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে জুলাইয়ের পর চুক্তি অনুমোদন করা হবে না বলে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) আবারও হুমকি দেয় মস্কো।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর পর বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্য সরবরাহ শৃঙ্খল গভীর সংকটে পড়ে যায়। কৃষ্ণ সাগর দিয়ে রফতানির এই চুক্তি সংকট প্রশমনে বড় ভূমিকা রেখেছে। চুক্তিটি কার্যকর রাখতে চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে মস্কো দুটি শর্তের ওপর জোর দিয়ে আসছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর পর বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্য সরবরাহ শৃঙ্খল গভীর সংকটে পড়ে যায়।
 
এর মধ্যে রয়েছে, পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগরের বন্দর পিভদেনিতে অ্যামোনিয়া সরবরাহ পুনরায় শুরু করা এবং রাশিয়ার কৃষি ব্যাংক রোজেলখোজ ব্যাংককে আন্তর্জাতিক আন্তঃব্যাংক লেনদেন প্ল্যাটফর্ম সুইফটের সঙ্গে পুনরায় সংযুক্ত করা।

বৃহস্পতিবার দেওয়া বিবৃতিতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, 'যদি রোসেলখোজ ব্যাংককে সুইফটের সঙ্গে যুক্ত না করা হয় এবং আমাদের কৃষি রফতানির অন্যান্য অবশিষ্ট 'পদ্ধতিগত' সমস্যার সমাধান না করা হয়, তাহলে 'ব্ল্যাক সি এক্সপোর্ট ইনিশিয়েটিভ' এর জন্য বিকল্প খুঁজতে হবে।'

রাশিয়ার কৃষি ব্যাংক রোজেলখোজ ব্যাংক

যদি রাশিয়া এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়, তবে ইউক্রেন এখনও ইউরোপের মধ্য দিয়ে স্থলপথে রফতানি করতে সক্ষম হবে। তবে এটি আরও ব্যয়বহুল বিশ্বব্যাপী দামকে প্রভাবিত করবে। 

ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত বছরের জুনে সুইফট থেকে রোসেলখোজ ব্যাংককে বহিষ্কার করেছিল। জোটের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইইউ রাশিয়ান ব্যাংককে প্ল্যাটফর্মে ফিরিয়ে আনার কথা ভাবছে না।

যদি রাশিয়া এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায়, তবে ইউক্রেন এখনও ইউরোপের মধ্য দিয়ে স্থলপথে রফতানি করতে সক্ষম হবে।

রাশিয়ার খাদ্য ও সার রফতানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার অঙ্গীকার করে ইউক্রেনকে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্য রফতানির অনুমতি দিতে গত বছরের জুলাইয়ে মস্কোর সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি করে জাতিসংঘ। 

এই চুক্তির অধীনে, রোসেলখোজ ব্যাংক সুইফটে নয়, মার্কিন ব্যাংক জেপি মরগান চেজ অ্যান্ড কোং কিছু রাশিয়ান শস্য রফতানি বাণিজ্য করেছিল। বেশ কয়েকটি সূত্র গত মাসে রয়টার্সকে জানায়, তারা এ ধরনের আরও কয়েক ডজন লেনদেনের পরিকল্পনা করছে।

মার্কিন ব্যাংক জেপি মরগান চেজ অ্যান্ড কোং

রাশিয়া এখন জেপি মরগানের মাধ্যমে বাণিজ্য করতে অনিচ্ছুক কারণ প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর নয়। জাতিসংঘের একজন জ্যেষ্ঠ বাণিজ্য কর্মকর্তা জানান, তারা আফ্রিকান এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছেন যাতে আফ্রিকায় রাশিয়ার শস্য ও সার রফতানি বাণিজ্যে সহায়তা করা যায়।

কৃষ্ণ সাগরের মাধ্যমে শস্য রফতানি চুক্তিও অ্যামোনিয়ার নিরাপদ রফতানির ব্যবস্থা করে। কিন্তু কিয়েভ এখনও টোগলিয়াত্তি থেকে ইউক্রেনের পিভডেনিতে অ্যামোনিয়া প্রেরণের জন্য পাইপলাইনটি পুনরায় চালু করেনি। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া বছরে ২ লাখ টন পর্যন্ত অ্যামোনিয়া পাঠাতে পারে।

তারা আফ্রিকান এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছেন যাতে আফ্রিকায় রাশিয়ার শস্য ও সার রফতানি বাণিজ্যে সহায়তা করা যায়।

ইউক্রেন সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, মস্কো যদি কৃষ্ণ সাগরের শস্য চুক্তিতে আরও রফতানি পণ্য এবং আরও ইউক্রেনীয় বন্দর যুক্ত করতে সম্মত হয় তবে তারা রাশিয়াকে অ্যামোনিয়া রফতানির জন্য তাদের অঞ্চল ব্যবহারের অনুমতি দেবে।

রোসেলখোজ ব্যাংককে সুইফটের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া বা অ্যামোনিয়া রফতানি পাইপলাইন পুনরায় চালু করা ছাড়াও রাশিয়ার আরও বেশ কয়েকটি শর্ত রয়েছে। এগুলো হলো- রাশিয়াকে কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের অনুমতি দেওয়া, বিভিন্ন বন্দরে রুশ জাহাজ ও কার্গোর বীমা ও প্রবেশাধিকারের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া, রুশ সার কোম্পানিগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও তাদের লেনদেনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া।

ইত্তেফাক/ডিএস