উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চায়—এমন দাবি তারা তুলে ধরেছেন বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের কাছে। বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতা মো. সেলিম। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লাগানো একটি ব্যানারে দেখা যায়, রোহিঙ্গারা ইংরেজি ও বার্মিজ ভাষায় ব্যানার আকারে চারটি দাবি তুলে ধরেন—জাতীয় পরিচয়পত্র এবং নাগরিক অধিকার, নিজ বাসস্থান এবং জমি-জমা ফেরত, স্বাধীনভাবে চলা ফেরার অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
জানা যায়, মিয়ানমার রাখাইন রাজ্য থেকে দুই দফায় পালিয়ে আসা ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বর্তমানে বাংলাদেশে বসবাস করছে। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আর শুরু হয়নি। তবে ২০১৯ সালে দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা। পরে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে তথ্য যাচাই-বাছাই করতে ২০২৩ সালে ১৫ মার্চ মিয়ানমারের ১৭ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল টিম বাংলাদেশে আসেন। প্রথম তালিকার ১৬৮ পরিবারের ৪৮০ জনের তথ্য যাচাই-বাছাই ও সাক্ষাৎকার গ্রহণ করার পর তারা মিয়ানমার ফিরে যায়।
আবারও গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের মিনিস্ট্রি অব সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্সের মংডুর আঞ্চলিক পরিচালক অং মাইউসহ ১৭ জনের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসেন। প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজারে টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২৪, ২৬ এবং ২৭-এর পাইলট প্রজেক্টের অন্তর্ভুক্ত ২২৩টি রোহিঙ্গা পরিবারের ২২৩ জন রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২৬-এর এনজিও সংস্থা একশন এইডের কমিউনিটি সেন্টারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করে। এ সময় মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গাদের কাছে মিয়ানমারের সেনা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ১৫টি গ্রামে যেখানে প্রত্যাবাসন পরবর্তী রোহিঙ্গাদের রাখা হবে এবং সেসব গ্রামে সেনা সরকারের দেওয়া অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে পুনর্বাসন প্রকল্পে এবং সেখানে কী কী সুযোগ-সুবিধা থাকবে তা তুলে ধরেন। প্রতিনিধিদল জানায়, রোহিঙ্গারা রাখাইনে পৌঁছার পর তাদেরকে প্রথমে এনভিসি (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট) দেওয়া হবে। পরে নাগরিক হিসেবে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়া হবে। তখন স্বাধীনভাবে চলাফেরা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ চাকরির সুযোগ-সুবিধা পাবে রোহিঙ্গারা। এ সময় কয়েক জন রোহিঙ্গা নেতা প্রতিনিধিদলের উদ্দেশে বলেন, প্রত্যাবাসন শুরুর আগে রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এনভিসি কার্ডের পরিবর্তে এনআইডি কার্ড দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিজ ভিটাবাড়িতে পুনর্বাসন করতে হবে। মিয়ানমারের ১৩৫ সম্প্রদায়ের মানুষের মতো রোহিঙ্গাদের চলাফেরার স্বাধীনতা দিতে হবে। অন্যথায় কোনো রোহিঙ্গা দেশে ফিরতে রাজি হবে না।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার (উপসচিব) মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা জানান, দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টার বৈঠকে কিছু রোহিঙ্গা ফিরে যাওয়ার বিষয়ে নেতিবাচক এবং কিছু রোহিঙ্গা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। এর মধ্যে যারা ইতিবাচক, তাদের নিয়ে শিগিগরই প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি বলেন, প্রত্যাবাসন ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।