বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

রোমাকে হতাশ করে ইউরোপার শিরোপা সেভিয়ার ঘরে

আপডেট : ০১ জুন ২০২৩, ১৫:৪৪

রোমাকে টাইব্রেকারে ৪-১ গোলে হারিয়ে ইউরোপা লিগে নিজেদের শিরোপার ধারাবাহিকতা ধরে রাখলো সেভিয়া। এই নিয়ে সাতবারের ফাইনালে কোন প্রতিপক্ষই সেভিয়াকে হারাতে পারেনি।
 
বুদাপেস্টের পুসকাস অ্যারেনায় নির্ধারিত সময়ের ম্যাচটি ১-১ গোলে শেষ হয়। পাওলো দিবালার গোলে রোমা প্রথমে এগিয়ে গিয়েছিল। ৫৫ মিনিটে রোমা ডিফেন্ডার গিয়ানলুকা মানচিনির আত্মঘাতী গোলে সেভিয়া সমতায় ফিরে। এরপর ম্যাচটি অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু সেখানেও কোন গোল না হওয়ায় ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণে টা ব্রেকারের প্রয়োজন হয়। সেভিয়া গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনু দুইটি শট রক্ষা করে ম্যাচের নায়ক বনে যান।  

২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালে পেনাল্টিতে জয়সূচক গোলটি করা আর্জেন্টাইন গঞ্জালো মনটিয়েল ইউরোপা লিগের ফাইনালেও শিরোপা নির্ধারণী শটটি নিয়েছেন। রোমার পক্ষে পেনাল্টির সুযোগ হাতছাড়া করেছেন মানচিনি ও রজার ইবানেজ। 

৬২ বছর বয়সী কোচ হোসে লুইস মেনডিলিবারের অধীনে বদলে যাওয়া সেভিয়ার জন্য এই শিরোপা ছিল এক অনন্য অর্জন। মার্চে মেন্ডিবিলিয়ার সেভিয়ার দায়িত্ব নেন। দুই মাসেই বড় শিরোপা স্বাদ নিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন এই স্প্যানিশ কোচ। 

যদিও আগামী মৌসুমে সেভিয়াতে তার থাকা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কাল ম্যাচ শেষে মেন্ডিবিলিয়ার জানান, ‘আমরা এখন এই শিরোপা জয় উদযাপন করবো। কারণ এর পিছনে অনেক শ্রম রয়েছে। আমি এখনো জানিনা চুক্তি নবায়ন করবো কিনা, এনিয়ে চিন্তা করছি না।’

অভিজ্ঞ এই কোচের অধীনে লা লিগায় সেভিয়া রেলিগেশন এড়িয়েছে। আর এখন ইউরোপীয়ান শিরোপা ঘরে তুলেছে। মেন্ডিবিলিয়ার আরো জানান, ‘আমি যখন এই ক্লাবে আসি তখন খেলোয়াড়দের বলেছিলাম তারা সবাই অত্যন্ত ভাল মানের খেলোয়াড়। কিন্তু মানসিকভাবে তাদের সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে হবে। আমার দায়িত্ব ছিল সেই জায়গায় তাদের সহযোগিতা করা। দিনের শেষে তারা প্রমাণ করেছেন আসলেই তারা ভাল খেলোয়াড়।’

এদিকে ফাইনালে হারটা ছিল রোমা বস হোসে মরিনহোর জন্য চরম হতাশার। পাঁচটি সফল ইউরোপীয়ান ফাইনালে শেষে এই প্রথম হারের তিক্ত স্বাদ পেলেন দ্য স্পেশাল ওয়ান। 

ম্যাচের ৩৪ মিনিটেই গোল করে মরিনহোর আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন দিবালা। মানচিনির থ্রু বলে ঠান্ডা মাথায় সেভিয়া গোলরক্ষক বুনুকে পরাস্ত করেন তিনি। সেভিয়া অবশ্য পিছিয়ে পড়ে নার্ভাস হয়ে পড়েনি । বেশ কিছু কাউন্টার অ্যাটাকে তারা সমতায় ফেরার চেষ্টা করেছে। ইভান রাকিটিচের বা পায়ের জোরালো শট কোনমতে আটকে দেন রোমা গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিসিও। 

বিরতির পর  অলিভার তোরেস ও ব্রায়ান গিলের স্থানে সুসো ও এরিক লামেলাকে মাঠে নামান কোচ। স্প্যানিশ দলটি দ্বিতীয়ার্ধে আগ্রাসী হয়ে মাঠে নামে। ১০ মিনিটের মধ্যেই সমতায় ফিরে সেভিয়া। ডানদিক থেকে জেসুস নাভাসের ক্রসে পোস্টের খুব কাছ থেকে মানচিনির আত্মঘাতী গোলে রোমার কপাল পুড়ে। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝিতে রোমা আবারো এগিয়ে যাওয়ার বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু সেভিয়া ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় তা সম্ভব হয়নি। 

৬৮ মিনিটে দিবালার স্থানে মাঠে নামেন জর্জিনিও উইনালদাম। ম্যাচ শেষের ১৫ মিনিট আগে সেভিয়াকে পেনাল্টি উপহার দেন রেফারি অ্যান্থনি টেইলর। লুকাস ওকাম্পোসকে ফাউলের অপরাধে ইবানেজের বিরুদ্ধে এই পেনাল্টির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভিএআর সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়। বদলি খেলোয়াড় আন্দ্রে বেলোত্তি গোলরক্ষককে একা পেয়েও ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগ নষ্ট করলে এগিয়ে যাওয়া হয়নি রোমার। 
অতিরিক্ত সময়ে দুই দল তেমন কোন সুযোগ তৈরী করতে পারেনি। ডিফেন্ডার ক্রিস স্মলিংয়ের শট পোস্টে লাগলে আবারো হতাশ হতে হয় রোমাকে। 

পুরো ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে ১৩টি হলুদ কার্ড পেয়েছে যা উয়েফা ইউরোপা লিগের কোন ম্যাচে সর্বোচ্চ। প্রথম তিনটি স্পট কিক সফল হবার পর বুনো যখন মানচিনির শট রুখে দেন ও পরের শটে ইবানেজ পোস্টে লাগান তখন সেভিয়া রাকিটিচের গোলে ৩-১ ব্যবধানের লিড নেয়। কিন্তু ম্যাচের নাটকীয়তা তখনো বাকি ছিল। 

মন্টিয়েলের শট প্যাট্রিসিও প্রথম প্রচেষ্টায় রুখে দেন। কিন্তু গোলরক্ষকের ভুলে শটটি আবারও নেওয়ার নির্দেশ দিলে এবার আর কোন ভুল করেননি মন্টিয়েল।

ইত্তেফাক/এসএস